রান্নাঘরে বিশ্বরূপ দর্শন ২

0

রুই রোহিনী – বিশ্বরূপ ঘোষ দস্তিদার

আশাকরি তোমরা সবাই সুস্থ আছো। প্রথম পর্বের টিপসগুলো কেমন লেগেছে তোমাদের? জানাতে ভুলো না।
আজ আরেকটি উপাদানের কথা বলবো যেটি বাঙালি রান্নাঘরের একটি অবশ্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, তার নাম নারকেলের দুধ। আটপৌরে অথবা আনুষ্ঠানিক রান্নায় এটি রান্নার স্বাদ বহুগুণে বৃদ্ধি করে।
ছোটবেলায় দেখতাম নারকেল কুরে গরমজলে ধুয়ে ছেঁকে নিত মা ঠাকুমারা। এটা হতো আসলে প্রথম নির্যাস। নারকেল কোরাগুলো দ্বিতীয়বার গরমজলে ভালো করে চটকে বাকি দুধ বের করে তৈরি হতো দ্বিতীয় নির্যাস। এই দ্বিতীয় নির্যাসের জলে রান্না প্রায় হয়ে এলে প্রথম নির্যাসটি কড়াইতে ঢেলে দিয়ে ঘি ও গরমমসলা ছড়িয়ে নামিয়ে নিতো।
মাছ, মাংস, মুরগি  কিংবা সবজি সবেতেই এক নিয়ম। পরিমান কম হলে মিশিয়ে দিতে পারো ঘন গরুর দুধ। এতেও স্বাদের তফাৎ তেমন হয় না। তবে মনে রাখতে হবে দুধ বা নারকেলের দুধের রান্নায় টক জাতীয় জিনিস যথা লেবুর রস,টমেটো  বা ভিনিগার চলবে না। এতে দুধ কেটে যেতে পারে ও রান্না নষ্ট হয়ে যাবে।
তবে আজকাল ম্যাগি ইত্যাদি ব্র্যান্ডেড কোকোনাট মিল্ক বাজারে চলে এসেছে। এর একটি প্যাকেট তোমরা তোমাদের সংগ্রহে রাখতে পারো। পরিমান মতো জলে গুলে নিয়ে  ঘন বা পাতলা নারকেলের দুধ পেয়ে যাবে। ড্রেসিকেটেড নারকেলের গুঁড়ো পাওয়া যায়, যা অন্যান্য অনেক কাজে লাগে।
নাড়ু ইত্যাদি ঝটপট তৈরি হয়ে যায় ফেস্টিভ সিজিনে। এর সাথে মিল্কমেড মিশিয়ে নাড়াচাড়া করে সামান্য ঘি ও এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে পাক দিলেই তৈরি সাবেকি নাড়ু।
আজকের রান্নায় আসি এবার। এ রান্নার ভূমিকায় যখন নারকেল দুধের প্রসঙ্গ এনেছি তখন বুঝতেই পারছো যে রান্নার মূল উপাদান এটি। চলো, দেরি না করে ঝটপট বানিয়ে নেয়া যাক আজকের পদ।


রুই রোহিনী

এই রান্নার জন্য যে উপকরণগুলো চাই তা হলো :-
★পাকা রুই মাছ  ৬ টুকরো চৌকো করে কাটা
★জিরে বাটা ২ চা চামচ
★নারকেলের দুধ  ২ মাঝারি কাপ
★হলুদগুঁড়ো  ১ চা চামচ
★আদা বাটা  ১ চা চামচ
★সেদ্ধ পেঁয়াজ বাটা ১ চা চামচ
★কাঁচা লঙ্কা বাটা স্বাদ মতো (১ চামচ )
★লবন ও চিনি স্বাদ মতো
★দু কোয়া রসুন থেঁতো,একটি আস্ত শুকনো লঙ্কা ও সাদা আস্ত জিরে ও তেজপাতা (ফোড়ন এর জন্য)
★গুঁড়ো গরম মসলা
★মাছ  হালকা ভাজার জন্য সর্ষের তেল।


১টা মাঝারি পেঁয়াজ টুকরো করে কেটে জলে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে মিক্সার মেশিনে বা পাটায় বেটে নাও। গরম জলে দু চামচ নারকেলের পাউডার গুলে ২ কাপ পরিমান নারকেলের দুধ বানিয়ে নাও। আদা, জিরে ও কাঁচা লঙ্কা বেটে নাও।
রসুন থেঁতো করে রেখো। প্রথম পাত্রে তেল গরম করে মাছ  হালকা ভেজে নাও। (বাকি তেল ঠান্ডা হলে সরিয়ে রাখো অন্য পাত্রে।পরে আবার মাছ ভাজায় কাজে লাগবে।)
অন্য একটি কড়াই নিয়ে তাতে এক টেবিল চামচ তেল গরম করে রসুন থেঁতো, জিরা, তেজপাতা ও একটা আস্ত শুকনো লঙ্কা দাও। মিনিট খানেক নেড়ে নিয়ে ওতে একে একে সেদ্ধ পেঁয়াজবাটা, আদাবাটা, জিরেবাটা, হলুদ, কাঁচালঙ্কাবাটা ও সামান্য লবণ দিয়ে  জলের ছিটে মেরে কষিয়ে নাও। তেল ছেড়ে এলে ও কাঁচা গন্ধ চলে গেলে নারকেলের দুধ দাও। ফুটতে দাও ১০ মিনিট।
এবার এতে ছাড়ো ভাজা মাছগুলো। ফুটে এলে নুন মিষ্টি চেখে দেখে নেবে। ঝোল ঘন করার আরও কিছু পদ্ধতি আছে যদি ঘন করতে চাও তো। গোটা পাঁচেক কাজু বাদাম, অথবা খোসা ছড়ানো কাঠবাদাম, কিংবা পোস্ত বাটা এমনকি অমুলের ফ্রেশক্রীমও ব্যবহার করা যায়। তবে প্রয়োজন না থাকলে দিও না। গুঁড়ো গরমমসলা ছড়িয়ে নামিয়ে সাদা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করো। 

Leave a Reply

error: Content is protected !!