রান্নাঘরে বিশ্বরূপ দর্শন ১
পিকনিক মাটন – বিশ্বরূপ ঘোষ দস্তিদার
মুখবন্ধ
গানের পেশা না হলে আমার হয়তো বাবুর্চির পেশা কিংবা ট্রাভেলের কোনো দিকের একটা বিষয়ে পেশা হতো।
ভূতের রাজার তিনটি বরের প্রতি আমার দুর্বলতা ছোটবেলায় সেই গুপী- বাঘা-কে শোনার ও দেখার পরেই। তবে এই ব্লগে মূলতঃ রান্নাবান্নার পোস্টই থাকবে।
রান্নার নানা সহজ অথচ অন্যমাত্রার রেসিপির খোঁজ করেছি সারাটা জীবন। “নববধূর ডায়েরি” নাম দিয়ে আমার তখনকার নতুন বিয়ে হওয়া ছাত্রীদের জন্য একটা বই বের করব বলে একবার হুজুগ উঠেছিল। কিন্তু সে আর হয়ে ওঠেনি।বহুযুগ পরে, মূলতঃ দেবুদার উদ্যোগে এই রান্নাবান্নার বিষয়ে লেখা শুরু করার ইচ্ছে হলো।
আমার রান্নাগুলোতে কিন্তু একেবারেই পিউরিটান শেফেদের মতো হিসেব নিকেশের বালাই নেই, যেমন আজকাল অনেকেরই রান্নার ফর্দে দেখতে পাই। পরিমান ও পরিমাপ তৈরি হয় রান্না করতে করতে। আমাদের ঠাকুমা দিদিমারা কোনোদিন কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে রান্না শিখে আসেননি। তবুও আপন মনের মাধুরী মেশানো সে রান্না সামান্য মশলা সহযোগে যা সুস্বাদু হতো, সে যাদের ভাগ্যে জুটেছে তারাই জানি। একগাদা মশলা ও জটিল রন্ধন প্রক্রিয়া আমার কোনোদিনই পছন্দ নয়।
তাই আমার বেছে নেওয়া সব কয়টি রেসিপিই হবে সল্প আয়োজনে ঘরোয়া উপকরণ ও পরিবেশেই বানিয়ে নেওয়া যায়, এমন। যেকোনো রান্নাঘরে যে নূন্যতম রান্নার উপকরণ থাকা উচিত, তার মধ্যে তিনটি কড়াই (একটা বড়, একটা ছোট মাঝারি ও একটা ছোট, ভাজাভুজির জন্য), দুটো পেসার কুকার, হাতা খুন্তি প্রয়োজন মতো, গামলা দুটো, বাটি বিভিন্ন সাইজের,ফেটানোর হাত যন্ত্র ও মিক্সার মেশিন (শিলনোড়া আরও ভালো,বাটতে জানলে), সাঁড়াশি, ছুরি, কাঁচি ও চপিং বোর্ড অন্যতম।
মশলার মধ্যে ধনে, জিরে, শুকনো লংকার গুঁড়ো, কালজিরে, সাদা ও কালো সর্ষে, পাঁচফোড়ন, রাঁধুনি, পোস্ত দরকারী।
বাঙালী নানান রান্নায় তেঁতুল, লেবু, ধোনে পাতা, আমাদা চাই। তার সঙ্গে চাই আদা, রসুন, পেঁয়াজ বাটা ও কোয়া। আগেথেকে বেটে ফ্রিজে জমিয়ে রাখা যায়। এসবের গুঁড়োও পাওয়া যায় আজকাল। সেগুলো দিয়েও রান্না ভালো হয়। বেরেস্তা (ভাজা পেঁয়াজ) কিনে কৌটোয় রেখে দাও। সময় বাঁচবে।
ধনে পাতা,পু দিনা পাতা কাঁচালঙ্কা বেটে ফ্রিজে রেখে দিও ছোট ছোট পাত্রে।
আজকাল চাইনিজ রান্নাও বাঙালি হেঁসেলের নিত্য সঙ্গী। তার জন্য সোয়া সস, সুইট চিলি সস, টমেটো সস ও সিজুয়ান সস, সাদা তিল, তিলের তেলও রাখতে পারো। মধু সব রান্নাতেই ব্যবহার করা যায়,এমনকি স্যালাডেও।
মোগলাই রান্নার জন্য গোলাপজল, কেওড়া জল, মিঠা আতর, জাফরান, জৈত্রী চাই। গরম মশলার মধ্যে লবঙ্গ, সাদা এলাচ, কালো এলাচ, দারুচিনি, জায়ফল, গোলমরিচ ও কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো চাই। চাই তেজপাতা ও আস্ত শুকনো লঙ্কা, মৌরি,আস্ত ধনে,আস্ত জিরে ও হিং ফোড়নের জন্য। আর রতন জোট লাগে যদি রোগান জোশ বানাতে চাও।
এই উপকরণগুলো হলো গিয়ে বেসিক মশলা। মাপার কাপ থাকলেও ওজনের জন্য মেশিন থাকলে আরো ভালো।
এসব মশলাপাতি প্রতি ১৫ দিন অন্তর দেখে নেবে স্টকে আছে কিনা। নুন, চিনি, চাপাতা, দুধ, মাখন, ঘি ও চীজ ঘরে থাকা ভালো। সঙ্গে জ্যাম বা মার্মালেড। একটু ক্রিম, চিকিন ও ভেজিটেবল ব্রথ বোতলে ভরে রাখতে পারো।
মুগ, মুসুর, ছোলা, বিউলি, মটর, আস্ত মুগ, আটা ও ময়দা ঘর বলে রাখতে হবে। সেদ্ধ চালের পাশাপাশি আতপ চাল ও মজুদ রাখা উচিত। স্যুপ ইত্যাদির জন্য নরের স্যুপ এর প্যাকেট ও কর্নফ্লাওয়ারের প্যাকেট লাগে।
ছোলার ছাতু সবজি ও শাককে শুকনো করতে সাহায্য করে। এছাড়া চানা মশলা, চাট মশলা, কস্তুরী মেথি, আমচুর পাউডার, জলজিরা পাউডার, টুনার টিন সংগ্রহে রাখলে রকমারি রান্না করা যায়। ইউরোপিয়ান রান্নায় লাগে রোসমেরি, থাইম, বেসিল, চিলি ফ্লেকস, ও অরিগানো। চিরে, মুড়ি,
পাস্তা কিনে রাখতে পারো সঙ্গে সুজিও – পারফেক্ট টিফিনের জন্য। কর্ন ফ্লেকস, গুঁড়ো দুধ সময় মতো জলখাবারের কাজে আসে।
ম্যাগি মসলা কিউব নানা রান্নায় দেয়া যায়।কিছুটা রাখা ভালো।কাজে আসে। ফ্রিজে ফ্রোজেন ভেজিটেবল, রোজ সিরাপ,স্কোয়াশ জাতীয় পানীয়,কিংবা কোক পেপসি বা ফ্রুটি থাকলে হঠাৎ অতিথি এলে দুশ্চিন্তায় পড়বেনা। দুটো টমেটো পিউরীর টিন থাকলে অনেক রান্নায় ভোগান্তির অবসান হতে পারে।
ফ্রাই জাতীয় খাবারের জন্য বেসন, ছোলার ছাতু, ব্রেডক্রাম, ওটস, চালের গুঁড়ো এমনকি কর্নফ্লাওয়ারও কাজে দেয়।
সঙ্গে বিস্কুট, সল্টেড বাদাম,কাজু বাদাম বা রোস্টেড পেস্তা রাখতে পারলে অনেক মাথাব্যথা কমে যায়। ডিম ডজনখানেক থাকলে চটজলদি লাঞ্চ, টিফিন বা ডিনারে ব্যবহার করা যায়। মাছ, মুরগি ও খাসির মাংস কিছুটা করে ফ্রিজে রাখবে।
মোটামুটি ওপরে উল্লিখিত জিনিসপত্রগুলো ঘরে থাকলে কোনো রান্না করতে অসুবিধা হবে না।
একটা কথা বলে রাখি। রান্নার আধুনিক যন্ত্রপাতি যতটা পারো কিনবে যেমন মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেক্ট্রিক কেটলি, টি/কফি মেকার, টোস্টার, ইন্ডাকশন কুকার, স্টীমার ইত্যাদি। যদি মাইক্রো ওয়েভ বা গ্রিল মেশিন থাকে তবে তা আরো
ভালো। এগুলো তোমার কাজের সময় অনেক কমিয়ে দেবে।
এবার চলে যাই খাবার বানাতে। একেক দিন একেকটা। সবাই বানিও আর পারলে খেতে কেমন লাগলো জানাও।
পিকনিক মাটন
১ কেজি খাসির মাংস
১০০ গ্রাম মিষ্টি দই
৪০০ গ্রাম টক দই
ক্যাপসিকাম তিনটে মাঝারি হলে, নইলে দুটো
লবণ
কত কম উপকরণ বলো! অথচ স্বাদে অনন্য।
এটা রুমালী রুটি বা পরোটা দিয়ে জমে যাবে। দেখবে কেউ কড়াই চেটে খাচ্ছে।
পুরো দই টা হ্যান্ড মিক্সারে ( দুটো দই একসাথে) ফেটিয়ে নাও ভালো করে, যাতে কোনো দানা না থাকে। দেখবে বেশি টক দইয়ে রান্নাটা ভালো হবে না। কম টক, ফ্রেশ দই, কেনা মাদার ডেয়ারীর মতো। মাংস ভালো করে ধুয়ে ফেটানো দই মাখিয়ে ম্যারিনেড করে রেখো আধ ঘন্টা। কড়াই চাপিয়ে ১ টেবিল চামচ তেল দাও, যে কোনো তেল, সর্ষে বা সাদা যা পছন্দ। মাঝারি আঁচে মারিনেটেড মাংসটা বসিয়ে পাত্র ঢাকা দাও। মাঝে মাঝে উল্টেপাল্টে দেবে। জল ছাড়বে। আনুমানিক আধঘন্টা পরে, একটা সময় জল টেনে অর্ধেক হলে, ডুমো ডুমো করে কাটা ক্যাপসিকাম গুলো ধুয়ে দিয়ে দাও। আঁচ নিবু করে সেদ্ধ হতে দাও আরো আধঘন্টা । এরপর দাও লবন স্বাদ অনুসারে। একটা সময় সব জল শুকিয়ে তেল ছাড়তে থাকবে। এটা মাংস ও দই এর জন্য বেরোনো সম্মিলিত তেল। এতেই মাংস গুলো ভাজা ভাজা হয়ে এলে গরমাগরম পাতে বেড়ে ফেলো।
রুমালী রুটি বা পরোটা দিয়ে, সঙ্গে পেঁয়াজের স্যালাডের ওপর চাটমশলা ও লেবু ছড়িয়ে পরিবেশন করো। এ রান্না এত সোজা অথচ দশ বারোজনের দিব্যি পেট পুরে ডিনার হতে পারে। পিকনিক বা ছোট্ট জমায়েতে এটা সুপারহিট হবেই হবে।
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (একাদশ কিস্তি)বৃষ্টির শুরুতেই সামান্য ঠান্ডা পড়তে শুরু করলো। ক্লাবে লোক আসা একটু কমলো। বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেলতে…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (দশম কিস্তি)(৮) শিফট ডিউটি আরম্ভ হতেই জীবনটা জীবিকার প্রয়োজন মাত্র হয়ে দাঁড়াল। অদ্ভুত সময়ে ঘুম থেকে…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (নবম কিস্তি)আমাদের পুরো ব্যাচটাকে কয়েকটা ছোট ছোট দলে ভাগ করা হলো। আমাদের দলে আমি, কর, সিং…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (অষ্টম কিস্তি)আমার মুখে হাসির ছোঁয়া দেখে বিপদভঞ্জন দুঃখ দুঃখ মুখ করে জিজ্ঞেস করল, ‘ছেড়ে দিলো?’ ‘কান…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (সপ্তম কিস্তি)নিকলের নিয়োগপত্র বার পাঁচেক খুঁটিয়ে পড়ে নিশ্চিন্ত হয়ে, আমার টুইডের কোটটা গায়ে দিয়ে অফিসে গেলাম।…