ও দাঁড়িয়ে আছে! – সোমাদ্রি সাহা
অনেক দিন হলো নদীর কোনও খবর পাইনি। কেমন আছে নদী। আমি দেখি রোজই ও অনলাইন থাকে। যদিও আমাকে কিছুই বলে না। স্বাভাবিক ব্যাপার, নদী তো এখন আর আমাকে ভালোবাসে না। অথবা বাসে। নীরবে। এই যেমন আমি রয়েছি ওর প্রতীক্ষায়। ধুর। ভুলে যাবো সেসব। সবটাই তো মায়া। এসব ভাবতে ভাবতেই বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম।
উল্টোদিকে একটা বাড়ি আছে বটে, তবে সেটা হাত বদল হয়েছে কিছুদিন আগেই। কেন হয়েছে আমার জানা নেই। এলাকার চেনা পরিচিতরা সে বিষয় কিছুই বলতে পারে নিই আমায়। শুনলাম প্রোমোটাররা আসে বটে কিন্তু কিছু দিন পরেই বাড়িটা হাত বদল হয়। আসলে বাড়িটা পুরোনো আমলের তাই মনের মধ্যে একটা জিঘাংসার উদয় হয়েছিল।
আমার আবার বিষয় সম্পত্তি নিয়ে ততটা মাথাব্যথা নেই। আমি শুধু জি মাইনর, সি মাইনর বুঝি। আরে আমি গীটার বাজাই। তাই তো অনেক সময় নিজের ঘরের চেহারা দেখে নিজেই ভয় পাই। মা তো আছেই…আমার ছন্নছাড়া জীবনে গালাগাল দেওয়ার জন্য।
***
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে। সেই পুরোনো বাড়ির ওদিকটায় চোখ গেল। বাড়িটাতে কী হচ্ছে! একবার উপরে ঘরের লাইট জ্বলছে। একবার নীচে। একবার বাঁ দিকে। একবার ডানদিকে। কিছু তো বুঝতে পারছি না। মা বলেছিল, এই বারান্দায় সন্ধ্যার পরে না আসতে। আমি তো বাড়িতে থাকি না তেমন। তাই আর বুঝতেই পারিনি এরকম সব ঘটনা ওপারের বাড়িটাতে ঘটে। জানি না বাবা। নাকি আজই এই রকম ঘটনা প্রথম ঘটল। আমরা সবে কিছুদিন হলো এখানে এসেছি। আগে তো বালিগঞ্জে থাকতাম। এই অঞ্চলে একটু কমে ফ্ল্যাট পাওয়া যাচ্ছিল। আজ বুঝলাম এখানে দাম কম কেন। সকলেই রাস্তা দিয়ে যায় আসে…আর ওপারের বাড়িটার দিকে তাকায়…আমিও তাকিয়ে আছি। সেকি…মনে হচ্ছে ঐ উপরের ডানদিকের ঘরে একটি কিশোরী দাঁড়িয়ে। হাসছে। একটু আগেই আলো জ্বলছিল, নিভে যাচ্ছিলো। এসব ভূতের কান্ড নাকি…
– মা, ও মা…
~ কী হলো ডাকছিস কেন!
– এমনি।
~ এমনি মানে!
– আরে ঐ বাড়িতে ভূত আছে নাকি! আলো জ্বলছে, নিভছে। পুরো ইংরেজি সিনেমার মতো হচ্ছে গো। আবার একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল উপরের ডানদিকের ঘরে।
~ ধুর ওসব কিছু না। ঐ বাড়িতে একটা মিষ্টি দুষ্টু মেয়ে আছে। ও এসব করে। ভয় দেখায়।
– কি নাম তার। সে এতো জলদি কেমন করে এতোগুলো ঘরের আলো নিভিয়ে দেয়…জ্বালিয়ে দেয়।
~ ওসব তোকে ভাবতে হবে না। আমাদের বাড়িতে তো কিছু হচ্ছে না। আমরা তো ভালো আছি। কমে ফ্ল্যাট কিনলে এসব একটু সহ্য করতে হয়।
– তাই!
~ তাই না তো তাই। যখন পড়াশুনো শেখাতে চেয়েছিলাম শিখিসনি। তাই এখন এভাবেই এ বাড়িতে থাকতে হবে। গীটার বাজিয়ে তো বেশি রোজগার করিস না।
– তা ঠিক। এমন হবেই। আমার ক্ষমতা অনুসারে তো কিনেছিলাম। কোনক্রমে। এখন তো অনেক দিনের লোন টানতে হবে। ইএমআই, ইসিএস।
~ টানবি। এতো শোনানোর কিছু নেই।
– শোনাচ্ছি না। তবে উল্টো দিকে বাড়িতে একটা রহস্য রয়েছে।
***
কাল রাতে ভীষণ বৃষ্টি হয়েছে। এখন কফি খেতে খেতে বারান্দায় গিয়ে দেখলাম ওপারের বাড়িতে একটি দম্পতি এলো। নব দম্পতি নয়। মনে হয় কয়েক বছর বিয়ে হয়েছে। তবে আসবাব নিয়ে টেম্পো এসেছে। ভালোই হল। কিন্তু বিষয়টা হলো মা যে বলল কাল ওখানে একটা মেয়ে আছে। মানে মা দেখেছে নিশ্চয়ই। তাহলে ঐ দালালটা ওভাবে কী বলছে। দালালটা তো বলছে এই বাড়ির চাবি আজ থেকে আপনাদের। আমার মাথায় জটিল কিছু আবার ঢোকে না।
***
– এই পাড়াটা বেশ নিস্তব্ধ।
~ তা ঠিক। তবে উল্টো দিকের বাড়ির ছেলেটা আমাদের দেখছিল।
– ধুর। সে তো কফি বা চা খাচ্ছিলো মনে হল। সারাদিন তো আর তোমাকে দেখছে না।
~ তবু। আমি পর্দা লাগিয়ে দেবো জানলাগুলোতে। আমার এসব একদম ভালোই লাগে না।
– যা খুশি করো। এটা এখন তোমার বাড়ি। আমরা তো কিনে নিয়েছি…
~ কিনেছি বলেই তো বলছি, পাড়াটা নিস্তব্ধ।
– ভালোই তো। নীরবতাই তো ভালো। মেন রাস্তায় গাড়ির আওয়াজ হতেই থাকে।
এভাবেই নতুন বাড়িতে নানা কথার মায়াজালে নীল আর পুপে নিজেদের মধ্যে বর্ষার এই দুপুরে, ধূসর আনন্দে মিশে গেল।
***
অনেকটা রাত। রাত্রি। নীল বই পড়ছে। মনে হলো উপরের ঘরে কেউ যেন হাটছে। অথচ পুপে তো রান্না ঘরে। আর তো কেউ নেই বাড়িতে। আবার মন দিলো বইতে। বইটা উল্টাচ্ছে…বেশ জমিয়ে লিখেছে জয়াশিস ঘোষ…বৃষ্টি বাই লেন। কবিতাগুলো খাসা। আবার আওয়াজ হলো। বৃষ্টি তো নেই এখন। উপরের থেকে আওয়াজ এলো। নীল মনে মনে ভাবলো পুরোনো বাড়ি কেনার এই এক ঝামেলা। লোক কম। জায়গা বেশি। একটা ভূতের ভয় কাজ করেই। উপরে উঠে গেল। শোবার ঘর। বিছানা বালিশ সবই ঠিক আছে। আওয়াজটা কোথা থেকে হলো। ধুর…আবার নেমে এলো। খেতে বসেছে। রাতে রুটি আর পনিরের তরকারি। মুখে দুই তিনবার দিয়েছে, আবার আওয়াজ। পুপে দৌড়ে গেল উপরের ঘরে। গিয়েই চিত্কার করে উঠলো…
(২)
নীল যখন পৌঁছালো দেখলো পুপে ভয় পেয়ে গেছে। জানলাটার সামনে পর্দাটা একবার সরে যাচ্ছে। আলো আসছে। আবার ঢেকে যাচ্ছে। নীল বোঝালো। বাইরে হাওয়া দিচ্ছে। জানলাটা কোনওরকম করে খুলে গেছে।
***
রাতে দু’জনেই ঘুমাচ্ছে। রাত অনেক। গভীররাত। নীরবতা। মাঝে মাঝে কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। নাইটগার্ডটা চলে যাওয়ার পরে কুকুরগুলো চলে গেল। নীল ঘুমাচ্ছিলো। যেমন এই পাড়াতে সকলে ঘুমাচ্ছে। চাদরটা সরে গেল। আস্তে আস্তে। নীল নিজের গায়ে টেনে নিলো। বৃষ্টি রাত। পুরোনো বাড়ি তাই ঠান্ডা লাগা তো স্বাভাবিক। চাদরের তলা দিয়ে একটা হাত এগিয়ে যাচ্ছে। পুপেকে স্পর্শ করলো। পুপে একবার নড়াচড়া করতেই… হাতটা অদৃশ্য।
কিছুক্ষণ পরে আবার ঘরের দরজাটা নড়ে উঠলো। আওয়াজে এবার পুপের ঘুম ভাঙলো। পুপের চ্যাঁচানিতে নীল উঠে বসলো। নীল এগিয়ে গেল দরজার দিকে। তারপর হাতে তুলে নিলো সামনে থাকা ছাতাটা। আসতে আসতে এগিয়ে গেল। দরজার দিকে। আসতে করে… খুলে দিল দরজা। কেউ নেই… এগিয়ে গেল সামনের দিকে। ঘরের ওদিকের সিড়ি দিয়ে মনে হল একটা ছায়া চলে গেল।
***
পুপে পুজোর ঘরে। পুজোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। হাসি শুনতে পেলো। একটা বাচ্চা মেয়ের শব্দ। মনে হলো হাসছে। ডাকছে। পুপে মন দিয়ে পুজো করতে শুরু করলো। কিন্তু ঘন্টা নেই…ঘন্টাটা নীচের ঘরের থেকে আওয়াজ আসছে। তাহলে…
ছুটে গিয়ে দেখলো নীচের ঘরে খাটের উপরে ঘন্টাটা। ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক। যদিও পুপে ভয় পেলো না। এগিয়ে গেলো। ঘন্টাটা তুলে নিল। সাথে সাথেই পুজোর ঘরের থেকে ফুলগুলো উড়ে এসে গায়ের উপর ফুল বৃষ্টি হলো। এমন তো স্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক নয়। কী করে হচ্ছে এসব। এই বাড়িতে তাহলে কী আছে। ভূত। একটা মেয়ে ভূত বাচ্চা…কিছুই বুঝতে পারছে না পুপে…
***
আমি দেখতে পেলাম ঐ বাচ্চা মেয়েটা আমাকে আবার ডাকছে। চেঁচিয়ে বলছে — ‘বাঁচাও, বাঁচাও আমাকে মা মারছে। এই ঘরে আটকে রেখেছে।’
আমি তো কিছু বুঝলাম না। নেমে সোজা ওপারের বাড়িতে গিয়ে বেল টিপলাম।
~ কাকে চাই!
– এ কী আপনার হাতে বটি কেন? মারবেন নাকি?
~ আরে তা নয়। এটা আমার প্রোটেকশন। একটু আগেই…
– একটু আগেই আপনি আপনার মেয়েকে মেরেছেন।
~ না তো। আমার মেয়ে কোথা থেকে এলো…
– মেয়েটা তো চেঁচাচ্ছে। উপরের ঘরে বন্দী। আমাকে ডাকছে। বাঁচানোর জন্য।
~ ও মাই গড। আমার কোন ইস্যু নেই। মেয়ে তো দূরের কথা। ঐ মেয়েটা আপনাকে দ্যাখা দিল! আমাকে কিছুদিন ধরে খুব বিরক্ত করছে। আমি জানি না ওর আমরা কী ক্ষতি করেছি।
– আমাকে একবার ঐ ঘরটা দ্যাখানো যাবে!
~ হ্যাঁ। অবশ্যই। আমি তো বাড়িতে একা।
– আরে ভয় পাবেন না। আমি আপনার ক্ষতি করবো না। দাদাকে ফোন করেছেন।
~ কী হবে করে! ও তো অফিস ট্যুরে রয়েছে।
– তাহলে…
~ তাহলে কী এই ভূত বাড়িতে একা একাই থাকতে হবে। কম দামে পুরো বাড়ি বিক্রি তখনই আমাদের বোঝা উচিত ছিল। আমার বরটাও যেন কেমন…লোভে…
– যাক সে সব। সে তো আমরাও কম দামে ফ্ল্যাট কিনেছি। ভূতের এলাকা জানলে তো কিনতাম না। তবে ভূতটা কী চাইছে সেটা তো বুঝতে হবে।
~ ঠিক বলেছেন। আমি অনেকবার ডেকেছি। কিন্তু মেয়েটি আমার কাছে আসেনি। আদর করেই ডেকেছি…
– আপনি কী ওর নাম জানেন।
~ না। তবে এই বাড়ির নামটা ধরেই ডেকেছি।
– বাড়ির নাম মানে…
~ আরে এই বাড়ির চাবি, ঘড়ি সব পুরোনো দিনের। সবেতেই লেখা বিচিত্রা। তাই ভাবলাম বিচিত্রা মনে হয় মেয়েটার নাম।
– ভুল করেছেন। বিচিত্রা যতদূর সম্ভব ঐ মেয়েটার মায়ের নাম। মেয়েটা ভয়ে পালিয়ে গ্যাছে তাই।
~ এ মা, এটা তো আমার মাথায় আসেনি। এবার কী হবে!
– কিছু হবার নেই। আমাদের ঐ ঘরটায় যেতে হবে। যে ঘরটায় ও বেশিরভাগ সময় থাকে।
~ আসুন।
***
ঘরটা আগেকার দিনের। অনেক ছবি রয়েছে। আমি সাহস করে ঢুকলাম। গায়ে লোম খাড়া হয়ে গ্যাছে। বুঝতে পারছি। তবু সাহস তো জাগাতেই হবে। বললাম নরম করে ‘মা, কোথায় তুমি! সামনে এসো। কথা বলবো, তোমার কথা শুনবো। অনেক আদর করবো। খেলনা কিনে দেবো। কেউ তোমাকে আর মারতে না।’
কেউ এলো না। কেউ আসবে না জানতাম। আমি শুধু বৌদির দিকে দেখছিলাম। ওনাকে কেউ আক্রমণ করবে বলে মনে হচ্ছিলো। কিছুই হলো না তেমন। অন্ধকার ঘর। আঁধারি। অনন্ত এক সন্ধ্যা নামল। আমি বাড়ি ফিরে এলাম। বললাম — ‘আজ রাতে আমি আপনার বাড়িতে ঘুমাতে চাই। কোনও উদ্দেশ্য অসৎ নয়। এটুকু বিশ্বাস রাখুন।’
উনি লজ্জা পেলেন। বললেন সম্মতি রয়েছে। কারণ উনি নিজেই এই বাড়ি থেকে পালাতে চায়। দাদাকে ফোন করলাম। ওনার স্বামীকেও সব কথা বললাম। উনি রাতের ফ্লাইটেই রওনা দেবে।
***
এখন রাত সাড়ে এগারোটা। এই সবে খেয়ে উঠলাম। খেলাম। তবে নিজের বাড়িতে নয়। বৌদি রান্না করেছেন। বেশ রান্না করেন। ঠিক হলো আজ আমরা সারা রাত জেগে থাকবো। আর তাই সাথে করে গীটার নিয়ে এসেছি। গান বাজনা, আড্ডা এসবই হবে। কিন্তু মজার বিষয় কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই জনের কেমন যেন ঘুম গ্রাস করল। তারপর আমি ঘুমিয়ে পরেছি। অনেকক্ষণ। কিছুই জানি না। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়িতে রাত দুটো পাঁচ। দেখি বৌদি নেই। একটা আওয়াজ আসছে। কেউ যেন কিছু একটা টানাটানি করছে। লোহার কোদালের মতো শব্দ। আমি পিছনের বাগানে সাহস করে গেলাম। কেউ নেই। মোবইলের টর্চের আলোতে কিছুই দেখতে পেলাম না। ঘরে ফিরে এলাম। বাড়ির উপর থেকে নয়, নীচের দিক থেকে আওয়াজ। রান্না ঘর। তার পাশের থেকে আওয়াজ। কিন্তু রান্নাঘরে কেউ নেই। তাহলে…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (একাদশ কিস্তি)বৃষ্টির শুরুতেই সামান্য ঠান্ডা পড়তে শুরু করলো। ক্লাবে লোক আসা একটু কমলো। বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেলতে…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (দশম কিস্তি)(৮) শিফট ডিউটি আরম্ভ হতেই জীবনটা জীবিকার প্রয়োজন মাত্র হয়ে দাঁড়াল। অদ্ভুত সময়ে ঘুম থেকে…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (নবম কিস্তি)আমাদের পুরো ব্যাচটাকে কয়েকটা ছোট ছোট দলে ভাগ করা হলো। আমাদের দলে আমি, কর, সিং…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (অষ্টম কিস্তি)আমার মুখে হাসির ছোঁয়া দেখে বিপদভঞ্জন দুঃখ দুঃখ মুখ করে জিজ্ঞেস করল, ‘ছেড়ে দিলো?’ ‘কান…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (সপ্তম কিস্তি)নিকলের নিয়োগপত্র বার পাঁচেক খুঁটিয়ে পড়ে নিশ্চিন্ত হয়ে, আমার টুইডের কোটটা গায়ে দিয়ে অফিসে গেলাম।…
আমি রান্না ঘরের এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম। ইঁদুর এদিক ওদিক করছে। মাকড়শার জাল। একটা টিকটিকি ডেকে উঠলো। কিন্তু ঐ কোদালের শব্দটাতো আসছেই। কী মুশকিল… আমি চিৎকার করলাম…পুপে বৌদি….উত্তর নেই। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম রান্না ঘরের পুরোনো কাঠের একটা আলমারিটা একটু হেলে রয়েছে। কাছে গিয়ে দেখি পিছনে দরজা। আগেকার দিনে রান্না ঘরের সাথে কয়লার ঘর থাকতো। সেই ঘরে আলো ফেলতেই অবাক। বৌদি একটা কোদাল দিয়ে কী যেন বের করছে…
আমি দৌড়ে গেলাম। বৌদি পাগলের মতো মাটি সরিয়ে চলেছে…
শেষে…
একটা কোমরের হাড় পেলাম। বৌদি সেই হাড়টা হাতে করেই বাইরে এলো। বৌদির নিজের তেমন হুশ নেই।
***
এখন রাত পৌনে চারটে। বৌদির জ্ঞান এসেছে। উনি বললেন যে ঘুমের মধ্যে ঐ বাচ্চা মেয়েটি ডাকছিল। মনে হলো কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে গেল পুপে বৌদি। গিয়ে দেখলো মেয়েটা ঢুকে গেল ঐ রান্না ঘরের পিছনে। সামনে যেতেই দরজার ভিতর থেকে কে যেন টেনে নিল। আর তারপর থেকেই মাটি খুড়েই চলেছে। আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না। ঐ হাড়টা ঐ ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটির। যে দাঁড়িয়ে থাকে। আর আমাকে অবাক করে দেয়। সম্মোহনী শক্তি আছে বাচ্চাটির। তবু কাল সকালে এই বাড়ির দালালটাকে ডাকতেই হচ্ছে।
***
দাদা মানে নীলদা ভোর সাড়ে ছটায় এসেছে। এখন বাজে সাড়ে দশটা। দালালটা এসেছে। তার থেকেই জানতে পারলাম এই বাড়িতে অনেক দিন আগে এক পরিবার ছিল। তারাই মনে হয় কোনও একটা বাড়ির কাজের লোককে মেরে দিয়েছিল। ছোট বাচ্চা মেয়েটি তারপর থেকেই ভূত হয়ে যায়। আর এই বাড়ি ভূতের বাড়ি হয়ে যায়। অনেককেই ও মেরেছে। আসলে সেই সময় একাত্তর সাল। কলকাতায় অভাবী অনেক পরিবার এসেছিল। ছিন্নমূল। তেমনই এই মেয়েটিও এসেছিল। কিন্তু এই বাড়ির মালকিন ছিল বিচিত্রাদেবী। সে ভালো করে কাজের লোকের সাথে ব্যবহার করতেন না। নিজের অহং। আর তাই একদিন অন্য কাজের লোক চুরি করে ঐ মেয়েটির উপর দোষ চাপিয়ে দেয়। আর ফলস্বরূপ তাকে মারা হয়। তারপর মার খেয়ে মেয়েটির কী হয়েছিল কেউ জানে না।
***
আমি, পুপে বৌদি ও নীলদা বুঝে গেলাম। ঐ কয়লার ঘরেই ওকে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল। তবে এই পুপে বৌদিকে দেখে কেন ওর কাছে এলো। দ্যাখা দিল। সেটা বুঝলাম না। তবে লক্ষ্য করলাম পুপে বৌদির হাতে একটা পুতুলের ট্যাটু করানো আছে। তাই দেখে মনে হয় বাচ্চাটি ভাবে এ তো আমার বন্ধু। তাই হয়তো নীরবে পুপে বৌদিকে ও দ্যাখা দিয়েছিল। ঠিক হলো ঐ হাড়টি আজই পিছনের বাগানে পুড়িয়ে দেওয়া হবে।
***
পুপে বৌদি চা বানাতে গিয়েছিল। আওয়াজ হলো। গিয়ে দেখি পুপে বৌদির চোখ মুখ কেমন হয়ে গেছে।
বৌদি পরে সুস্থ হয়ে বলেছিল কেউ যেন তার গলা টিপে ধরেছিল। মুখের উপর একটা রক্তাক্ত হাত…
নীল ও পুপে ঐ দিনই ঐ বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। তবে আমি ঐ বাড়িতেই হারটা পুড়িয়ে দিতে চেয়েও পারিনি। আমাকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল একটা শক্তি। অনেকদিন বারান্দায় যায়নি। তবে এই লেখাটা শেষ করে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াবো। দ্যাখা যাক ঐ বাচ্চা মেয়েটি আজ আমায় ডাকে কিনা। ও কি সত্যই দাঁড়িয়ে আছে!! আমারও তো চাই এক নিশ্চিন্ত ঘুম…