ইদ্রিস ও বিশ্ব পরিবেশ দিবস – সৌম্যেন কুন্ডা

অনেক বছর কাজ করেছি ঘুরে ঘুরে। অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে, অনেক ঘটনা/দুর্ঘটনার সাথে জড়িয়েছি। প্রায় সব কিছুর সাথেই জুড়ে আছে কোনো না কোনো বিশেষ মানুষের স্মৃতি। এদের কথা ভাবলে দুর্গাপুর, মালদা, ফারাক্কা, রায়গঞ্জ,কোলকাতা, দিল্লি,কোট কাপুড়া, দাদরী, হলদোয়ানি, আবু ধাবি, রূএইস, মুম্বাই, পুনে, রঞ্জনগাঁও, জামশেদপুর, সুরতগড় বা খড়গপুর এক হয়ে যায়। শুধু ভেসে আসে কিছু মুখের ছবি যারা আক্ষরিক অর্থেই আলাদা। এদের মধ্যে আজ বিশেষ করে মনে পড়ছে একজনের কথা।
নাম ছিল তার ইদ্রিস। সম্ভবত মহম্মদ ইদ্রিস। ম্যাকিনটোশ বার্নের মেকানিক। তামাটে ফর্সা, সুন্দর চেহারা এবং মনের মানুষ, ইদ্রিস। সবসময়ে হাসিমুখ। আমরা এক প্রজেক্টে কাজ করেছি ফরাক্কায়,সালটা ছিল সম্ভবত ১৯৮৩ সালে।
যখন ফীডার ক্যানালের পাড় থেকে মাঝামাঝি অবস্থানের বক্স-গার্ডারে হেঁটে যাওয়ার গ্যাঙওয়ে, আমাকে কয়েক মূহুর্তের ব্যবধানে বাঁচিয়ে, ভেঙে পড়ল ক্যানালের জলে সমস্ত শালবল্লী, প্রিস্ট্রেসিং কেবল সাথে নিয়ে, হতবাক আমি বোধবুদ্ধিহীন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম ডেকের ওপর, যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় এক দ্বীপবাসী, তখন পাড়ে দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে সাহস যোগাচ্ছিল ঐ ইদ্রিস। কয়েক ঘণ্টা পর যখন দড়ির মই বেয়ে ঝুলতে ঝুলতে নৌকায় নামলাম তখনও টাল সামলানোর জন্য প্রথম হাতটি ছিল ইদ্রিসের। তিন ঘন্টা পরে প্রথম জল খাইয়েছিল ইদ্রিস। সাথী ইন্জিনিয়াররা শহরে গিয়েছিলেন হেড অফিসে ফোন করতে।
কিছু দূরের শহর জঙ্গীপুরে সিনেমা দেখতে যেত দল বেঁধে ঠিকাদার, মেকানিক, শ্রমিক সবাই একসাথে। একবার সিনেমা চলাকালীন প্রোজেক্টর খারাপ হয়ে যায়। দর্শক ইদ্রিস ঘন্টাখানেক সময় লাগিয়ে ঠিক করে দিয়েছিল প্রোজেক্টর। অনেক অনুরোধেও সে একটি টাকাও পারিশ্রমিক নেয় নি। ফলস্বরূপ এরপর থেকে ম্যাকিনটোশ বার্নের সাইট থেকে কেউ সিনেমা দেখতে গেলে হাজার ভীড় থাকলেও টিকিট পেতে অসুবিধা হয়নি কারও।
একদিন ইদ্রিস এল আমার কাছে। কিছু কথা আছে ওর। বিহারের কোনও এক গ্রামে ওর বাড়ি। বাড়ির পাশেই ওর চাচেড়া (খুড়তুতো) ভাইয়ের বাড়ি। ও বাড়ির বিশাল তেঁতুল গাছের পাতা পড়ে ইদ্রিসের উঠোন নোংরা হয় রোজ, ঝাড় দিতে দিতে নাজেহাল হয়ে যায় ইদ্রিসের স্ত্রী। বারবার বলা সত্ত্বেও কাজ হচ্ছে না। কি করা যায়? বললাম গাছের গোড়ায় হিং দিয়ে দাও, গাছ মরে যাবে। খুশি মনে চলে গেল ইদ্রিস। পরদিন সকালে অফিসে ঢোকার সাথে সাথে ইদ্রিস হাজির। “কি হলো ইদ্রিস? “, ” নেহি সাহিব ও নেহি হোগা হামসে। পেড় কো কিঁউ মারু, পেড় নে মেরা কেয়া বিগাড়া? কুছ ঔর বাতলাইয়ে।” বড়ো লজ্জায় মাথা নীচু করে বলেছিলাম “ভেবে বলছি।” এখনও মাথা নীচু হয়ে যায়, ইদ্রিসের কথা মনে হলেই। কেন ওর মতো ভাবতে পারি না আমরা! কেন বলতে পারি না “কেন কাটব গাছ? সে তো আমার কোনও ক্ষতি করেনি!”
সামনেই বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ইদ্রিস হয়তো জানেও না যে প্রতি পাঁচই জুন ওর কথা মনে করে মাথা নীচু করে থাকি, ওর কথা বলি অনেককে। কেউ বলে “একই কথা ঘ্যানঘেনিয়ে বলতে ভালো লাগে? ” আমি বলি “কি করি বল্, ইদ্রিসরা পেছন ছাড়ে না যে!”
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (ষষ্ঠ কিস্তি)বম্বেতে গিয়ে জীবনে প্রথম কোনও নারীর কাছ থেকে বাংলায়, ‘আমি (তোমাকে) ভালবাসি’ শুনলাম। মেয়েটির মারাঠী,…
- ঋতুযান উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ উদ্বোধন অনুষ্ঠান
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (পঞ্চম কিস্তি)(৪) এন. টি-র চাকরিতে আমার কলকাতার বাইরে প্রথম ট্যুর এলো, আহমেদাবাদ আর বম্বে। সব মিলে…
- ব্যোমকেশ – অজিতের মেসবাড়িমহাত্মা গান্ধী রোডের ৬৬ নম্বর বাড়িটিকে প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং হাউস নামে পরিচিত।এই বোর্ডিং হাউসটি ২০১৭ সালে…
- রবি ঠাকুরের মূর্তি – স্ট্র্যাটফোর্ড আপঅন অ্যাভনদেবব্রত সান্যাল : উইলিয়াম শেক্সপিয়রের জন্মস্থানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি দেখে অবাক ও খুশি হলাম। রবীন্দ্রনাথ…