বাগান বিলাস(দ্বিতীয় পর্ব) – ক্ষমা ভট্টাচার্য্য

0

বাড়িতে টবে গাছ লাগালে তার উপকারিতা

পরিকল্পনাহীন নগরায়নের কুফল আজ প্রতি মুহূর্তে জানান দিচ্ছে।সবুজ ছাড়া প্রাণ বাঁচে কি উপায়ে! বিশেষত যারা একসময় সবুজে ঘেরা মাঠ ঘাট জঙ্গলের সাথে বড় হয়েছে, কাদামাটি জলে ভিজে মাখামাখি ছেলেবেলার সেই দিন ফেলে জীবন জীবিকার প্রয়োজনে শহরে আশ্রয় নিলেও সবুজকে এরা মনের ভেতর লালন করে চলে, ধরে রাখে বাসস্থানের আনাচে কানাচে। এছাড়া আছেন গাছ প্রেমিক কিছু সৌখিন মানুষ জন আছেন।এই দুই এর সমাপতনে মিলজুলে তৈরী হয় বাগান – ছাদে – বারান্দায় – ব্যালকনিতে জানলার কার্নিশ ভরে ওঠে সবুজে।

ঠিক, এমনি বাগান তৈরির প্রাথমিক বাসনা যাদের একটু একটু আছে তারা আজই নেমে পড়ুন এই কাজে।
খুব সহজলভ্য, বিশেষ যত্নের প্রয়োজন পরে না, ঘরের ভেতরেই রাখা যায় এমন কিছু গাছ দিয়ে শুরু হোক প্রথম অধ্যায় –
১) তুলসি গাছ
২) স্নেকপ্ল্যান্ট বা শাশুড়ির জিহ্বা
৩) অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী
৪) টার্টল ভাইন
৫) সুইট পটেটো ভাইন
৬) লাকি ব্যাম্বু
৭) স্পাইডার প্ল্যান্ট
৮) আইভি লতা।
৯) ওয়ান্ডারিং জিউ
১০)ফাইকাস।
১১) পিস লিলি

স্নেক প্ল্যান্ট

স্নেক প্ল্যান্ট :- ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে এই গাছ অত্যন্ত কমজনপ্রিয়। খুব অল্প আলো আর জলে এই গাছ বেঁচে থাকে। দিনের বেলায় তো বটেই রাতেও এই গাছ অক্সিজেন দিয়ে থাকে। এছাড়া, বাতাসের দূষিত পদার্থ শোষণ করে ঘরের ভেতরে পরিষ্কার হাওয়ার যোগান দেয়। এই গাছে খুব সুন্দর ছড়ার মত সাদা ফুলও দেখা যায়। মাটির শুকিয়ে গেলে তবেই জল দিতে হয়। ইনডোর প্ল্যান্টের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী গাছে যাতে জল না জমে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়।

তুলসি গাছ

তুলসি :- পুজো পার্বণ ছাড়াও তুলসির গুণাগুণ সকলের জানা। তুলসি গাছ ও বাতাসের বিষাক্ত গ্যাস শোষণ করে বায়ু পরিশুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। তবে জলের ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার যেন কোনো মতেই জল না জমে যায়। তুলসি গাছের সাথে যেকোনো ছোট গুল্ম জাতীয় গাছ, দূর্বা ঘাস লাগালে তুলসি গাছ ভালো থাকে।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা :- ঘরের বাতাস পরিশ্রুত করতে অ্যালুভেরার জুড়ি মেলা ভার। বাতাসের কার্বন মনোক্সাইড, কার্বনডাই অক্সাইড ও অন্যান্য দূষিত গ্যাস শোষণ করে বাতাসকে নির্মল করে তোলে। এই গাছের পাতার জেলির মত অংশটি চুল ও ত্বকের পক্ষে খুব উপকারী। এছাড়া এই জেলি সঠিক সেবনে নানান অ্যালার্জি, সুগার প্রভৃতি রোগের পক্ষে উপকারী মানা হয়। এই গাছেও সুন্দর নয়নাভিরাম লালচে কমলা ফুল স্টিকের আকারে দেখা যায়।

স্পাইডার প্ল্যান্ট

স্পাইডার প্ল্যান্ট:- অত্যন্ত সুদৃশ্য এই গাছটি চেহারার সাথে নানান গুনের অধিকারী। কেবলমাত্র একটি গাছই ২০০ বর্গ মিটার মত জায়গাকে দূষণ মুক্ত রাখতে পারে। বাতাসের গ্যাসোলিন, স্টাই রিন ইত্যাদি দূষিত পদার্থ শোষণ করে নিতে পারে।খুব কম আলো ও জলে এই গাছ বেঁচে থাকতে পারে। গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই গাছেও সুন্দর তারার মত ছোট ফুল হতে দেখা যায়।

লাকি ব্যাম্বু

লাকি ব্যাম্বু :- যারা বাস্তু মানেন, তারা এই গাছকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে জ্ঞান করেন। একটি ছোট পটে ছোট ছোট নুড়ি পাথর তার মধ্যে জলে ডুবিয়ে রাখলেই এই গাছ বেঁচে থাকে বহুদিন। এক সপ্তাহ পর পর জল পালটে দিলেই হলো। টিভি ক্যাবিনেট, ডাইনিং টেবিল অথবা সেন্টার টেবিলে রেখে দিলে ঘরের ভোল পালটে যায়। এই গাছও বাতাস পরিষ্কার করে।

আইভি লতা

আইভি লতা :- খুবই সুদৃশ্য এই বাহারি লতা। এছাড়া, বায়ু দূষণ রোধ ও দুর্গন্ধ শুষে নিতে পারে এই গাছ।

ফাইকাস

ফাইকাস :- ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এই গাছের জুড়ি নেই।খুব অল্প আলোয় বেঁচে থাকতে পারে এই গাছ। জল ও দু তিন দিন পর দিলে ভালো। বায়ুদূষণ রোধে করে এই গাছ। তবে পাতা বিষাক্ত হবার কারনে বাড়ির শিশু ও পোষা প্রাণীদের নাগালের বাইরে রাখাই শ্রেয়।

পিস লিলি

পিস লিলি :- ঘর সাজানোর জন্য উপযুক্ত আরেকটি গাছ হলো পিস লিলি। এর জন্য খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন নেই। অল্প আলো আর উষ্ণ অথচ আদ্র জায়গা এই গাছের পক্ষে অনুকূল। বায়ু শোধনেও পিস লিলি ভীষণই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ঘন সবুজ একরাশ
পাতা নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি এই গাছ বেড়ে ওঠে। এর সাদা ফুল দেখতে ভারী সুন্দর।যদিও সাদা অংশটি ফুল নয় – ফুলকে ঘিরে ঢেকে রাখার পরিবর্তিত বিশেষ পাতা। এই ফুলে হালকা সুগন্ধ আছে। আর সারা সময় ধরেই এই ফুল ফুটে চলে।

ওপরের সব গাছই টবের হিসেবে বলা। তবে মাটিতেও লাগানো যেতে পারে। দোয়াশ মাটি বা বেলে মাটিতে গাছগুলি লাগালে ভালো আর জৈব সার। শুধু খেয়াল রাখা গাছের গোড়ায় যেন জল না জমে যায়। বছরে একবার মাটি পালটে দিলেই হলো।

এখন যে গাছগুলির কথা বলবো (মানি প্ল্যান্ট, সুইট পটেটো ভাইন, ওয়ান্ডারিং জিউ, টার্টল ভাইন, আইভি লতা) প্রতিটি গাছই অসম্ভব সুন্দর।আর খুব সহজেই এগুলি লাগানো যায়। বারান্দায় বাস্কেটে ঝুলিয়ে দিলে দেখতে যেমন সুন্দর লাগবে আবার জায়গাও বিশেষ লাগবে না। অল্প জল – দু তিন দিন বাদে আর লিকুইড সার দু সপ্তাহ পর বা মাসে একবার যেকোনো জৈব সার অল্প দিলেই চলবে। মাটিতে খুব বেশি যেন জল না থাকে। এতে গাছের শিকড়ে পচন ধরার সম্ভাবনা। ইচ্ছে হলে মাটিতে অথবা কাঁচের জারেও রাখতে পারেন।

তথ্য ঋণ :

গুগুল

information sources
Documentary
Institutional
Personal

Leave a Reply

error: Content is protected !!