বাগান বিলাস(প্রথম পর্ব)- ক্ষমা ভট্টাচার্য্য

0
আমারই তোলা লাটাগুরির রিসর্টের ছবি।

একজন বেঁচে বর্তে থাকা মানুষ ইচ্ছে অনিচ্ছের বাইরে প্রতি মুহূর্তে যে কাজ করে চলে-তা হলো শ্বাস নেওয়া আর শ্বাস ছাড়া।
সাধারণত ঘণ্টায় প্রায় পঞ্চাশ লিটারের মত অক্সিজেন একজন মানুষ গ্রহণ করে থাকে।আর গাছের প্রতিটি পাতা থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিলি লিটার অক্সিজেন নিঃসৃত হয়। একটি এয়ার টাইট ঘরে একজন মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের জন্য মাঝারি সাইজের ৫০০ থেকে ৭০০ গাছ প্রয়োজন।

বিজ্ঞানীদের মতে কমপক্ষে একশ গাছ একটি বাড়ির অক্সিজেন মাত্রায় যথেষ্ট তারতম্যের সৃষ্টি করে। শহরের গাছপালা ঘেরা অঞ্চল অথবা খুব সামান্য সবুজে ঘেরা অংশ যেখানেই বসবাস করি না কেন ঘরোয়া নিজস্ব এক টুকরো বাগানই আশেপাশের সংলগ্ন পরিবেশে অক্সিজেন উৎপাদনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।
একটি গাছ শুধু একটি প্রাণ নয় – দুটো পূর্ণ বয়স্ক গাছ চারজন সদস্যভুক্ত পরিবারের সারা বছরের অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করে।
এছাড়া একটি চারা গাছ বাতাস থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১২ কেজি কার্বনডাইঅক্সাইড শোষণ করে বায়ুকে পরিশুদ্ধ করে।
যদি হিসেবটা অন্য ভাবে করি দেখা যাবে একজন রোগী যার অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ছে তাকে ঘণ্টায় আনুমানিক (স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে) দুশো টাকা খরচ করতে হয় অর্থাৎ চব্বিশ ঘন্টায় পাঁচ হাজার টাকার মত।
তাইলে সহজেই অনুমান করা যায়, একজন গড় আয়ুর মানুষ কত টাকার অক্সিজেন প্রকৃতি থেকে বিনা মূল্যেই পেয়ে থাকে! তাই আসুন অন্তত একটি করে গাছ পরিবারের প্রতি সদস্য পিছু লাগানোর প্রয়াস নিই শুধু নিজেদের সুস্থতার জন্য।

ইন্ডিয়ান ফরেস্ট ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় একটি পঞ্চাশ বছর বেঁচে থাকা গাছ প্রকৃতিকে কী কী উপায়ে পরিপুষ্ট করে আর্থিক মূল্যের বিচারে তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন।
বায়ু দূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষায় – দশ লাখ টাকা।
বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে – পাঁচ লাখ টাকা
ভূমিক্ষয় রোধ ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি – পাঁচ লাখ টাকা।
গাছে বাস করা পাখি ও অন্য প্রাণীদের খাবার ও বাসস্থান – পাঁচ লাখ টাকা।

জীবনদায়ী নির্গত অক্সিজেন – পাঁচ লাখ টাকা।
জ্বালানি-আসবাবপত্র কাঠ, ফল সরবরাহকরে – পাঁচ লাখ টাকা।

বিভিন্ন জন্তুর খাবার বাবদ – চল্লিশ হাজার টাকা।
অর্থাৎ পঞ্চাশ বছর বেঁচে থাকা একটি গাছের থেকে আর্থিক মূল্যে প্রাপ্তি পঁয়ত্রিশ লাখ চল্লিশ হাজার টাকা।
এছাড়া,ঝড়, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধেও গাছের ভূমিকা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত।

বাঞ্ছারামের বাগান আর কতজনের ভাগে জোটে! শহরের ইঁট কাঠ পাথর সরিয়ে একটু ইচ্ছে আর অল্প পরিশ্রমের বিনিময়ে ছাদ,বারান্দা, জানলার কার্নিশে সবুজের ছোঁয়া আনা যেতেই পারে! আর মিলিত প্রচেষ্টায় শহরের তাপমাত্রায় ও এর প্রভাব পরতে বাধ্য। এই বাগান পরিচর্যার মাধ্যমে বাইরের তাপ মাত্রা আর ঘরের তাপ মাত্রায় প্রায় দু ডিগ্রি সেলসিয়াস ফারাক অনায়াসে তৈরি করা যেতে পারে।

যে উষ্ণায়ন প্রতি মুহূর্তে ভ্রূকুটি দেখাচ্ছে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আসুন তার বিপরীতে সকলে মিলে একটি
আন্তরিক সদিচ্ছার প্রচেষ্টা গড়ে তুলি।

(এর পর চোখ রাখুন দ্বিতীয় পর্বে)

তথ্যঋণ স্বীকার:- গুগুল

information sources
Documentary
Institutional
Personal

Leave a Reply

error: Content is protected !!