বীজব্যালকনি – সোমাদ্রি সাহা

0
photo of monstera leaf on circle vase

অজস্র সময় পেলে
সুশীলদা গাছের ভিতর পাখিদের খোঁজে।
এ এক প্রাচীন কাব্য,
কৃষ্ণের পা খুঁজে পাওয়ার ইতিহাসে
সাজিয়ে নিচ্ছে শক্তি, সুনীল, শঙ্খ কাব্য।
ঐ যে পাখিটির মা,
উড়ে এসে বসল
দেখেই বুঝেতে পেরেছে
সে তো তার সন্তানদের খুঁজেই চলেছে
আবৃত্তির এই মহা সমাগমে।
কিন্তু সন্তানের পাখনা
এখন আকাশ ছুঁয়েছে।
দেখতে গ্যাছে অদূরে রাজনৈতিক সভা।
সভা নয়, করোনার আতুড়ঘর।
তবু সুশীলদা চায়ের কাপ রেখে
পাখি পরিবারের কার্নিশ
ইতিউতি দেখতে থাকে
এভারেস্টের মাথা থেকেই।
সময় এখন হাতির মতো লিলিপুট।

এত সময় পেলে
রবি ঠাকুরের উপন্যাস
মাঝ পথে ছেড়েই
গান আসে রিবের হারমোনিয়ামে।
ঐ যেমনটা মানুষ করে
মাথামুন্ডুহীন এক জীবনে।

সংসার, বাজার, পড়ানো
সব ছেড়ে দশ কিলোমিটার দূরে
যেতে হবে না অফিস।
লকডাউনের আজব কারখানা সর্বত্র।

পাখির দল ফিরে এসেছে খানিক পরে।
সন্তানের কবিতাঘ্রাণ
রাত জাগা নক্ষত্রের আলো
তারাদের দূষণমুক্ত আকাশ
এসেছে সুশীলদার হাসিতে।

ব্যালকনিতে সুশীলদা দাঁড়িয়ে।
সময়ের কাজ নিয়ে
পর্যবেক্ষণ করছে
পাখি ঘুমের।

অথচ লক্ষ্যই করেনি,
সেই বিকেলের বিস্কুট টুকরো
টেনে নিয়ে যাচ্ছে পিঁপড়ের দল।
সময় নেই বাকি,
এসো
ঘরে তুলে রাখি।

সময়ের অমোঘ কবিতার চাবিকাঠি
লুকিয়ে রাখছে মহাকালে,
খুঁজে পেতেই হবে
কবিতাকে
এই করোনা সময়ের অভিমুখে।

না হলে আমার মেয়েকে,
আমার ছেলেকে
কী দিয়ে যাব,
এক চিতা আগুন পৃথিবী!
অসুস্থ গ্রহের জীবাণু
দূষিত বাতাস
কিনে খাওয়া
জল, অক্সিজেন সব সব শব…

সঞ্চয় তো কেবল কবিতার কয়েকটা পঙক্তি।
কী দিয়ে যাব আগামীকে…

এটাই সময়
বীজের ব্যাগ নিয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে
নবপ্রজন্মের চারা চোখে।
বাঁচিয়ে রাখতেই হবে সবুজের প্রাণ
অনেক গাছ জন্মাক
বুকের ভিতর থেকে
কুয়াশা রাতে
যখন সকলে ঘুমিয়ে থাকে
সময়ের খোঁজে।

ভোরের পাখিদের কলকাকলি
শুনতে পাওয়ার জন্যই
অজস্র অক্সিজেন সিলিন্ডারের বীজ
জন্ম লাভ করছে
সুশীদার শরীর থেকে,
অজস্র হাত
মানবিকতার চোখ
এগিয়ে আসছে
দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে
আমরা পারব,
হাম লোগো কো করনাহি হ্যায়
গো করোনা গো…

এক সপ্তাহের ক্যালেন্ডার
পিঁপড়ের সঞ্চিত বিস্কুটের মতো
সঞ্চয় করেই সুশীলদা চলেছে আপিস।

আপিসের পথেই
আমের আঁঠিতে জন্ম নিয়েছে
মহাকাব্য।

এই কাব্যই একদিন মহীরূঢ় হবে
আগামীর সময়।
সময়ের আগামী…

Leave a Reply

error: Content is protected !!