নৃত্যশিল্পীর বয়স ১০৬ বছর!
‘বয়স শুধুমাত্র একটা সংখ্যা’- অনেক বিখ্যাত মানুষের বক্তব্যে এই উক্তিটি উঠে এসেছে। সেই প্রমাণও দিয়েছেন তারা। তেমনই এক উদহারণ সৃষ্টিকারীর নাম আইলিন ক্র্যামার। বয়স তার ১০৬ বছর। তিনি একজন অস্ট্রেলিয়ান নৃত্যশিল্পী, লেখক ও নির্মাতা। যিনি এখনও পুরো উদ্যোমে নিজের স্বপ্নপূরণের পথে রয়েছেন। এখনও নাচেন। অন্যদের উজ্জীবিত করেন।
আইলিন ক্র্যামার তার একটি গল্পে সিডনিতে প্রবীণদের এক সেবাকেন্দ্রর ঘটনা তুলে ধরেছেন।
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (একাদশ কিস্তি)বৃষ্টির শুরুতেই সামান্য ঠান্ডা পড়তে শুরু করলো। ক্লাবে লোক আসা একটু কমলো। বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেলতে…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (দশম কিস্তি)(৮) শিফট ডিউটি আরম্ভ হতেই জীবনটা জীবিকার প্রয়োজন মাত্র হয়ে দাঁড়াল। অদ্ভুত সময়ে ঘুম থেকে…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (নবম কিস্তি)আমাদের পুরো ব্যাচটাকে কয়েকটা ছোট ছোট দলে ভাগ করা হলো। আমাদের দলে আমি, কর, সিং…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (অষ্টম কিস্তি)আমার মুখে হাসির ছোঁয়া দেখে বিপদভঞ্জন দুঃখ দুঃখ মুখ করে জিজ্ঞেস করল, ‘ছেড়ে দিলো?’ ‘কান…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (সপ্তম কিস্তি)নিকলের নিয়োগপত্র বার পাঁচেক খুঁটিয়ে পড়ে নিশ্চিন্ত হয়ে, আমার টুইডের কোটটা গায়ে দিয়ে অফিসে গেলাম।…
বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সম্মানজনক অংকন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি। তবে তার স্বপ্নের জায়গাটাকে ঘিরে আছে নাচ।
দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার পর ৯৯ বছর বয়সে আইলিন ক্র্যামার মাতৃভূমি অস্টেলিয়ায় ফিরে যান। তখন থেকে তার স্বপ্নপূরণের যাত্রা শুরু। যে বয়সটা মানুষ বিশ্রামে কাটিয়ে দেয়ার সময়, তখন তিনি ইচ্ছাপূরণের পথে নামেন।
অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আইলিন ক্র্যামার কয়েকজন শিল্পীর সঙ্গে এক হয়ে কয়েকটি নাচের ভিডিও নির্মাণ করেন। ১০৬ বছর বয়সে তিনি এখনও নিজের অর্ধেক শরীর ব্যবহার করে নাটকীয় ভঙ্গীতে পারফর্ম করতে সক্ষম। কিছুদিন আগে কোরিওগ্রাফিও করেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে আইলিন ক্র্যামার বলেন, ‘সিডনিতে ফিরে আসার পর আমি বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ি। নিডা (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ড্রামাটিক আর্ট)-তে ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট থিয়েটারে তিনটি বড় পরিসরে নাচ পারফর্ম করেছি।’
ক্র্যামার আরও বলেন, ‘আমি এডেলেইডে ও ব্রিজবেনের দুটি বড় নাচের উৎসবে অংশ নিয়েছি। একটি সিনেমাতেও ছিলাম। এছাড়া ছোট অনেক পারফর্মেন্সসহ আমার তিনটি বই প্রকাশ হয়েছে।’
সাক্ষাৎকারে ক্র্যামারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই বয়সের তিনি এত শক্তি ও উদ্যম কোথা থেকে পান? উত্তরে বলেন, ‘বৃদ্ধ শব্দটাকে নিষিদ্ধ করা হোক। আমি বৃদ্ধ নই। আমি শুধু এই পৃথিবীতে অনেকদিন ধরে আছি এবং এই দীর্ঘ চলার পথে কিছু বিষয় শিখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক আমাকে বলেন, আমার বয়স হয়েছে সেদিকে আমার নজর দেওয়া উচিত। কিন্তু ছোটবেলা আমার প্রতিটি কাজে ভিন্ন পরিচয় সৃষ্টি হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা এখনও রয়েছে।’
করোনাকলীন আইলিন ক্র্যামার হতাশাগ্রস্ত হয়ে তার একটি নাচের ভিডিওর কাজ মাঝপথে থামিয়ে দেন। কিন্তু সেই অবস্থা বেশিদিন ছিল না। এর কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভিডিওর জন্য আমি লোকেশনে যেতে পারিনি। তাই সে সময়ে একটি বই লিখে ফেলেছি।’
সিনেমার লোকশন ক্র্যামারের কাছে ভীষণ প্রিয়। এটা ছিল সিডনির গ্লেবের শহরতলীর একটি ডুমুর গাছের নিচে। সেখানে গাছের আঁঠার গন্ধ, মোরেটন বে’র বিশাল ডুমুর গাছের দৃশ্য, কুকাবুরা পাখির ডাক, এসব চিন্তা করতে গিয়ে ক্র্যামার যেন সেই জায়গায় ফিরে গিয়েছিলেন।
ক্র্যামার বলেন, ‘গাছটি আমার নাচের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আপনি যদিও সেখানে যান, অনুভব করবেন এটি হয়তো কোনও ভৌতিক রূপকথার জায়গা। এটি আমাকে শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।’
সম্প্রতি ক্র্যামার কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণ করেছেন। যা এখনও সম্পাদন টেবিলে রয়েছে। অন্যদিকে তার প্রধান প্রকাশনা সংস্থা বেসিক শেপস থেকে তার বইটি এ বছরের শেষে প্রকাশিত হবে। এছাড়া তিনি শতবর্ষে পদার্পণের পর একটি ছোটগল্পের সংকলন প্রকাশ করেছিলেন। এর নাম ‘এলিফ্যান্ট অ্যান্ড আদার স্টোরিস’।
মহামারিতে লকডাউনের কারণে অনেকের জীবন ঘরবন্দি হয়ে গেছে। কারও আবার একাকী সময় কেটেছে। এই প্রসঙ্গে ক্র্যামার বলেন, ‘কোভিডকে আমি কখনও বাধা মনে করিনি। নিজেকে কখনও একাও মনে হয়নি। আপনি যখন লেখালেখি করবেন, সেটিই সবচেয়ে বড় সঙ্গী।’
গত বছর নভেম্বরে ১০৬ বছর পূর্ণ করেন ক্র্যামার। সিডনির এলিজাবেথ বে’তে তার জন্মদিন উদযাপন করেন। যেখানে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্থানীয় তারকাদের। ক্র্যামার জানান, সেই দিনটি তার জীবনের স্বরণীয় দিনগুলোর একটি।
বয়সের তোয়াক্কা ক্র্যামার কখনও করেননি। সেই প্রমাণ তার কাজ দিয়ে বহুবার দিয়েছেন। ১০৪ বছর বয়সে তিনি নগ্ন ফটোশুট করে আলোচনা সৃষ্টি করেন। যার জন্য তাকে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ সম্মানজনক পোট্রেইট পুরস্কার ‘দ্য অ্যার্চিবেল্ড প্রাইজ’ প্রদান করা হয়। ক্র্যামার এ নিয়ে বলেন, ‘নগ্ন হওয়া কোনও বড় বিষয় নয়, যদি সেটা হয়ে থাকে শিল্পের জন্য।’
জীবনের ১০৬ বসন্ত পেরিয়ে আজও চিরসবুজ আইলিন ক্র্যামার। বয়সের কারণে অন্যদের মতো অসুস্থ হয়েও পড়ে থাকেন না তিনি। এমনকি ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন ছাড়া তিনি কোনও ওষুধ খান না।