অঘটন এবার কালো সোনার দেশে

টিনটিন থাকলে ভাবতে বসত বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন কোনটি? ১৯৯০ আসরের প্রথম ম্যাচে শিরোপাধারী আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারায় ক্যামেরুন। চমক দেখে বিশ্ব। তবে ক্যাপ্টেন হ্যাডকের মতো অনেকে মনে করে সেটার চেয়েও বড় অঘটন ছিল ২০০২ আসরে সেনেগালের কাছে শিরোপাধারী ফ্রান্সের হার। এবার মনে হয় অঘটনের নতুন ইতিহাস রচিত হলো। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবেচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিলো সৌদি আরব। গতকাল বিশ্বকাপের ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে ফেভারিট আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারায় এশিয়ার জায়ান্টরা। ম্যাচের প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল আয়োজক কাতারের প্রতিবেশী দেশটি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে প্রবল বিক্রমে ম্যাচে ফেরে তারা। দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে চমৎকার দুটি গোল আদায় করে সৌদি আরব। বিশ্বকাপে ষষ্ঠ আবির্ভাবে এটি সৌদি আরবের চতুর্থ জয়। তবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কোনো দলের বিপক্ষে প্রথম। বিশ্বকাপে এর আগে বড় দলের বিপক্ষে তাদের জয়টি ছিল ১৯৯৪’র আসরে। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ইউরোপিয়ান জায়ান্ট বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের দলটি। 

 এবারের বিশ্বকাপ শুরুর আগে-পরে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বেশ হৈ চৈ। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে কাতারের মাটিতে পা রাখে লিওনেল মেসি অ্যান্ড কোং। গতকাল ছিল তাদের এক বিশ্বরেকর্ড ছোয়ার হাতছানি। নিদেন পক্ষে ড্র করলেও ইতালির সর্বাধিক ৩৭ ম্যাচের অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি স্পর্শ করতো আর্জেন্টিনা। কিন্তু অদ্ভুত ফুটবল খেলে হারই দেখলো আলবিসেলেস্তেরা। ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেছিলেন সৌদি আরবকে হাল্কাভাবে নিচ্ছেন না তারা। কিন্তু গতকাল মাঠের খেলায় সৌদি আরবকে নিয়ে তাদের হোম ওয়ার্ক চোখে পড়েনি। বল পায়ে আক্রমণে গিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাঁপানো ফরোয়ার্ডরা সৌদি আরবের পাতা অফসাইড ফাঁদ ভাঙতে ব্যর্থ বারবার। বাজেভাবে অফসাইডে পড়ে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইনরা এর মাশুল দেয় বিশাল আকারে। প্রথমার্ধেই আর্জেন্টিনার তিন তিনটি গোল বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। অফসাইডে লাউতারো মার্টিনেজের বাতিল হয় দুই গোল। দু’বারই স্টেপ ওভার করে আগেভাগে দৌড় দেন মার্টিনেজ। এক গোল বাতিল হয় অধিনায়ক লিওনেল মেসির। সৌদি আরবের হাই-লাইন ডিফেন্সের কারণে প্রথমার্ধেই একটি নজির গড়ে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে মোট ৭ বার অফসাইড হন আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড়েরা। ২০০২ বিশ্বকাপের পর এমন নজির এই প্রথম। 

২০ বছর আগের বিশ্বকাপে স্পেন-আয়ারল্যান্ড ম্যাচে ৯ বার অফসাইড হয়েছিলেন স্প্যানিয়ার্ড খেলোয়াড়েরা। তবে কোনো ম্যাচের প্রথমার্ধে ৭টি অফসাইড হওয়ার নজির এই প্রথম। এই ম্যাচে দুই অর্ধ মিলিয়ে মোট ১০ বার অফসাইড হয়েছেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি অফসাইডে জড়ানোর রেকর্ড ইংল্যান্ডের। ১৯৮২ বিশ্বকাপে কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচে ২০ বার অফসাইড হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা। গতকাল আর্জেন্টিনার ডিফেন্সও ছিল নড়বড়ে। ওটামেন্ডি, রোমেরো, মলিনা, তালিয়াফিকোরা দৃষ্টিকটু ভুল করেছেন একের পর এক। পক্ষান্তরে  সৌদি আরবের ফরাসি কোচ হার্ভি রেনার্ডের পরকিল্পনা ছিল পরিষ্কার। নিজেদের ঘর সামলে নিয়ে হঠাৎ আক্রমণে আর্জেন্টিনার রক্ষণকে বিপাকে ফেলে তারা। পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনার গোলবারে তিনটি শট নেয় সৌদি আরব। এর দুটি থেকেই চমৎকার গোল আদায় করে এশিয়ার দলটি। অন্যদিকে ৭০% বল দখল রেখে ১৫টি শট নেয় আর্জেন্টিনা। এর মাত্র ৬টি ছিল অনটার্গেটে।  

error: Content is protected !!