একশো বছর ব্যাপী, সার্ক্যাসিয়ান গণহত্যা

0

সোমাদ্রি সাহা

স্থান: সার্ক্যাসিয়া, ককেশাস,
সময়: ১৮৬৪ – ১৮৬৭(প্রধান আক্রমণের সময়কাল), হতাহতের হার: ১৫,০০,০০০ অধিক, 
গণহত্যাকারী: রাশিয়ান সাম্রাজ্য, 
গণহত্যার কারণ: জাতি আগ্রাসন।

কৃষ্ণসাগরের উত্তর-পূর্ব দিকে, ইউরোপের পূর্ব দিকে সারকেসিয়ান অঞ্চল। সার্ক্যাসিওদের জাতিগতভাবে পরিষ্কার করে দেওয়ার এক ভয়াবহ সময়ের সাক্ষী বিশ্বের ইতিহাস। ১৮৬৪ সালে জোর করেই বাধ্য করা হয় যাতে তারা ঐ অঞ্চল ছেড়ে চলে যায়। নিজেদের পিতৃপুরুষের ভিটে ছেড়ে অন্য দেশে অভিবাসনের কথাই এই সময় বিশেষ ভাবে উঠে আসে। এখানে ধর্মের ও রুশদের একশো বছর ব্যাপী যুদ্ধের আবহ বিশেষ ভাবে দায়ী ছিল। আর যারা যেতে চাননি সেই সমস্ত বিপুল পরিমাণে সার্ক্যাসিওদের জেনোসাইডের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। অটোমান সাম্রাজ্যের সমস্ত বাসিন্দাকে উচ্ছেদ ছিল এই জেনোসাইড বা গণহত্যার (বৃহৎ অর্থে) প্রধান লক্ষ্য। রুশ-সার্ক্যাসিওদের একশো বছর ব্যাপী যুদ্ধ তখনও শেষের দিকে। ১৮৬৪ সাল থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত এই উচ্ছেদ ও হত্যার ইতিহাস বর্তমানে প্রতিবছর ২১ মে তারিখে পালিত হয় ঐ অঞ্চলে। উবেখ ও আবাজা দুই প্রধান সার্ক্যাসিও উপজাতিকে এই সময় দেশ ছাড়া করা হলেও তার সাথে ইনগুস, আরশটিন, চেচেনিও, অসেটিয়ান, আবখাজরাও এই বলির শিকার হয়েছিলেন।

জেনোসাইড বা গণহত্যা বলতে নির্দিষ্ট একটি ভৌগোলিক অংশে জাতি, বর্ণ, নাগরিকত্ব বা ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে একযোগে বা অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ হত্যা করাকে বোঝায়। এফবিআই-এর মতে গণহত্যা হলো সেই হত্যাকান্ড যখন কোন একটা ঘটনায় চার বা তার অধিক সংখ্যক মানুষ মারা যায় এবং হত্যাকান্ডের মাঝে কোন বিরতি থাকে না। গণহত্যা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট স্থানে ঘটে, যেখানে এক বা একাধিক মানুষ অধিকাংশ সময় উপরে বর্ণিত কারণবশত অন্যদের মেরে ফেলে। 
Genocide is intentional action to destroy a people (usually defined as an ethnic, national, racial, or religious group) in whole or in part.

১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান নাৎসি বাহিনী ইহুদীদের ওপর ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে নৃশংস নির্যাতন এবং গণহত্যা চালায়। ইতিহাসে এই গণহত্যাকে হলোকাস্ট বলে। 
২) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৫ সালে রুশ ককেসাস সেনাবাহিনী পূর্ব আনাতোলিয়ায় অগ্রসর অব্যাহত রাখলে, তুরস্কের তৎকালীন উসমানীয় সরকার স্থানীয় জাতিগত আর্মেনীয়দের স্থানান্তর এবং উচ্ছেদ শুরু করে। ফলশ্রুতিতে প্রায় ১৫ লক্ষের মতো আর্মেনীয় মৃত্যুবরণ করেছিল যা আর্মেনীয় গণহত্যা বলে পরিচিত। সে সময় তারা নারী, শিশু ও বয়স্ক লোকজনদেরকে পাঠিয়ে দেয় মরুভূমিতে, যেখানে তারা পরে মারা যান। 
৩) ১৯৭১-এ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমানে বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নৃশংস গণহত্যা চালায়। ধারণা করা হয়, এই গণহত্যায় ৩০ লক্ষ বাঙালি হত্যা করা হয়েছিল।

উপরের যে তিনটি উদাহরণ দিলাম, এই তিনটি ইতিহাসে অন্যতম বড় তিনটি গণহত্যা। এর সাথে আরও বড় গণহত্যার লিস্ট করা যেতে পারে, যেমন ইউরোপীয়দের আমেরিকা যাওয়ার পরে সেখানে কোটি কোটি নেটিভ আমেরিকানদের ওপর শত শত বছর ধরে চলা নৃশংস গণহত্যা এবং উচ্ছেদ। বা এখনকার মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নৃশংস গণহত্যা। লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি গণহত্যার সময়ই গণহত্যাকারীরা নানাধরণের প্রেক্ষাপট, পরিপ্রেক্ষিত, ইতিহাস বিকৃতি এবং মিথ্যাচারের অভিযোগ আনে। আসলে সব কিছুর পিছনে লুকিয়ে থাকে লোভ ও ক্ষমতার আগ্রাসন শক্তি। 
রুশদের মনের ভিতরে একশো বছর ধরে যে ভয়ের সঞ্চার হয়েছিল, একশো বছর ধরে সার্ক্যাসিওদের গেরিলা যুদ্ধের ফলে, সেই কারণে রুশরা একদম নির্মূল করে দিতে চেয়েছিল এই জাতিকে। যেমন করে ছোট মাছকে গিলে খায়, ঠিক তেমনি করে রুশদের আগ্রাসী নীতি শেষ করে দিতে চেয়েছিল সার্ক্যাসিওদের। অগণিত মানুষকে রুশ সেনা দল দেশ ছাড়া করে, আর যারা এর বিরোধীতা করে, নির্বিচারে হত্যা করা হয় তাদের। অনেক মানুষ নানা রকমের ভয়ঙ্কর সংক্রমণের থেকেই মারা যান। অনেকে মারা যান অটোমান কৃষ্ণ সাগরের বন্দরে। আসলে সকলেই বাঁচতে চেয়েছিলেন। সময় তো এভাবেই ইতিহাসে কালো সময়কে লিখে রেখেছে।

প্রেক্ষাপট

আঠারো শতাব্দীর শেষ থেকেই এবং উনিশ শতাব্দীর শুরুতেই রাশিয়ার সম্রাট দক্ষিণ অংশে তার সাম্রাজ্য প্রতিবেশী অটোমান ও কাজার সাম্রাজের প্রতি প্রসার করতে চান। তাই ককেশাস অঞ্চলে আঞ্চলিক রাজনীতিকে নির্ভর করে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৫৫ সাল সময় থেকে জর্জিয়ার রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে কার্টলি ও কাখেটি অঞ্চলে ইরানি সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। যদিও নাদীর শাহ মারা যান ১৭৪৭ সালে এবং পরবর্তীতে জর্জিয়ার রাজা দ্বিতীয় ইরেকলে ১৭৬২ সালে রাজা হলেও তিনি ১৭৮৩ সালে রাশিয়ার সাথে জর্জিয়েভস্ক চুক্তি করেন। তাই অঞ্চলটি রাশিয়ার দ্বারা সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু রাশিয়ার ক্ষমতা পরবর্তীতে কমতে থাকে এবং কাজার ইরান গুলিস্তানের চুক্তি করে। এই অবস্থায় রুশো-পারসিয়া যুদ্ধ হয়েছিল (১৮০৪-১৮১৩, ১৮২৬-১৮২৮। সবই ক্ষমতা দখলের লড়াই ককেশাস পর্বতমালাকে কেন্দ্র করে। পরবর্তীতে তার ভিতর আসে ধর্মের জাতাকল। মানে বাইজেনটিয়ান সভ্যতার মতোই খ্রিস্টধর্ম রাশিয়ায় ও মুসলমান অঞ্চলের ভিতর অবস্থিত সার্ক্যাসিওদের সুলতান চতুর্থ মুরাদ তার ক্রিমিন খানকে আদেশ দেয়। এই ভাবেই ধর্মান্তরিত করার এক বিপুল চাপ সার্ক্যাসিওদের উপর আসতে শুরু করে। অটোমান সম্রাট ও ক্রিমিন দুই তরফ থেকেই আক্রমণ চলতে থাকে। সময়টা ১৮৪০। সেই সময় সার্ক্যাসিওদের অনেকেই নাটিহায় ও নাগশুপ উপজাতিদের মতো খ্রিস্ট ও পাগান ধর্ম মেনে চলছিলেন না। ঐ সময় নবি ইমাম শামিল আর্বিভূত হন এবং সার্ক্যাসিওরা মুসলমান ও খ্রিস্ট ধর্মে বিভক্ত হয়ে যান। সারকেসিয়াতে রাশিয়ানদের তরফ থেকে বিরোধ আসতেই থাকে। সার্ক্যাসিওরা অ্যাডরিয়ানোপোল চুক্তি না মানতে চাইলেও অটোমান সেটাই লাগু করতে চান। এই সময় সার্ক্যাসিওদের সাথে ১৭৬৩ সাল থেকে ১৮৬৪ সাল পর্যন্ত শতবর্ষেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলতেই থাকে। 
রাশিয়ার মিলিটারিরা অনেকগুলি দূর্গ তৈরি করতে শুরু করে কিন্তু এই দূর্গগুলি লুঠ করার বিশেষ লক্ষ্য তৈরি হয়। অনেক সময় দেখা যায় এই দূর্গগুলি দখল করার ঘটনা ঘটতে থাকে। ১৮১৬ সালে সার্ক্যাসিওদের সাথে যুদ্ধ করার সময় আলেকসিয় ইয়ারমোলোভ বলেন সার্ক্যাসিওরা হলো ‘ভয়াবহ’। তিনি দূর্গ তৈরি করার পরিবর্তে সৈন্যবাহিনীর সীমারেখাকে শক্তিশালী করার দিকেই নজর দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন “moderation in the eyes of the Asiatics is a sign of weakness,” ইয়ারমোলোভ তার পরিকল্পনায় মিলিটারিদের নিয়ে সার্ক্যাসিওদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পরিকল্পনা গড়ে তোলে। তাদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল সার্ক্যাসিওদের উপরে পুরো দখল নেওয়ার৷ রাশিয়ান সৈন্যবাহিনী সমস্ত গ্রাম ধ্বংস করে দিতে শুরু করে, তারা মনে করেছিল সার্ক্যাসিওরা ওখানেই লুকিয়ে রয়েছে, এমনকি ঐ সময় মিলিটারি থেকে গণহত্যা, অপহরণ ও সমস্ত পরিবারকে ভিটেমাটি চ্যুত করা হতে থাকে। এই সময় বিরোধকারীরা অন্যান্য গ্রামে খাদ্যের জন্য ভিক্ষা চাইতে শুরু করে, তাই রাশিয়ান সৈন্যবাহিনীরা গ্রামের খাদ্যশস্য ও গৃহপালিত পশুপাখিদের মেরে ফেলতে শুরু করে, এমনকি তারা সার্ক্যাসিও সভ্যতাকেই মানচিত্র থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল। সার্ক্যাসিওরা আদিবাসী সমিতি বা ফেডারেশন তৈরি করতে থাকেন উপজাতি অঞ্চলে। এই কৌশলে তারা ঐ অঞ্চলের আদিবাসীদের নিয়ে রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে এক শক্ত বিরোধ গড়ে তোলে। রাশিয়ান সৈন্যবাহিনীও ব্যর্থ হয়ে যায়, তার কারণ আদিবাসীরা খুব দ্রুত এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যায়, কখনও কখনও পাহাড়ের চূড়া থেকে তারা প্রতিহত করার জন্য বাকি আদিবাসীদের সজাগ করে দেয়, আবার কখনও গেরিলা যুদ্ধের জন্য নিজেদের ভৌগোলিক জ্ঞানকে কাজে লাগায়। 
সার্ক্যাসিয়ানদের প্রতিরোধ আন্দোলন অব্যাহত থাকে, যেসব গ্রাম আগেই রাশিয়ান শাসনভার গ্রহণ করেছিল তাদের সাথে আবারও বিরোধিতা লক্ষ্য করা যায়। উপরন্তু, সার্ক্যাসিয়ান ইস্যুতে পশ্চিম দেশগুলি সহানুভূতি প্রকাশ করতে শুরু করে, বিশেষ করে ব্রিটেন, ১৮৩০-এর মধ্যবর্তী সময়ে যাদের সাহায্য চেয়ে ছিল সার্ক্যাসীয়রা এবং ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় মধ্যস্থতাকারী এবং গুপ্তচরবৃত্তি করেছিলেন তারা। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পরবর্তীকালে সার্ক্যাসিয়ানের সাহায্য করার জন্য ব্রিটিশরা আর এগিয়ে আসেনি। তারা কারণ হিসেবে ব্রিটিশ কূটনীতিকদের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত অঞ্চল হিসেবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ দেখান। এদিকে ইমাম শামিল উত্তরপূর্ব ককেশাসে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগ্রামে জয়লাভ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু রাশিয়ার কাছে শামিলের আত্মসমর্পণের পরও সার্ক্যাসিয়ানদের প্রতিরোধ অব্যাহত থাকে। 
ঐ সময় রাশিয়ানরা নিজেদের সীমারেখা পরিবর্তন করে সার্ক্যাসিয়ান প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল। সৈন্যবাহিনী রাস্তাগুলির ভিতর সম্পর্ক স্থাপন করে এবং এই সড়কের চারপাশের বনগুলি পরিষ্কার করে, স্থানীয় গ্রামগুলো ধ্বংস করে এবং প্রায়ই রাশিয়ানরা বা আদি-রাশিয়ান ককেশীয় জনগণের নতুন কৃষক সম্প্রদায়গুলিতে নিজেদের বসতি স্থাপন করে। এই ক্রমবর্ধমান রক্তাক্ত পরিস্থিতির মধ্যে, পাইকারি হারে গ্রামগুলিকে ধ্বংস করার এটি একটি আদর্শ কৌশল হয়ে ওঠে। 
১৮৩৭ সালে নাটুকাই, আবিজখ এবং শ্যাপসজ নেতৃবৃন্দ রাশিয়ান সাম্রাজ্যকে আত্মসমর্পণ ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের প্রস্তাব দিয়ে ছিলেন, রাশিয়ান ও কসাক বাহিনীগুলি কিউবান নদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেওয়ার শর্তে৷ তবে তাদের প্রস্তাব উপেক্ষা করা হয় এবং সার্ক্যাসিয়ান জমিগুলির একতরফা দখল করার চেষ্টা অব্যাহত থাকে যা ১৮৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত ছত্রিশতম নতুন কসাক স্ট্যানিটাসের সময় পর্যন্ত চলতেই থাকে। জেনারেল ইয়ারমোলভ মন্তব্য করেছিলেন যে “আমাদের সার্ক্যাসিদেশের ভূখণ্ডের প্রয়োজন, কিন্তু আমাদের সার্ক্যাসিয়ানদের প্রয়োজন নেই।” রাশিয়ান সামরিক কমান্ডাররা যেমন ইরমোলোভ এবং বুলগেরোভ, নিজেদের স্বার্থে তুলনামূলকভাবে প্রতিকূলতর যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় অর্জনের গৌরব লাভ করার জন্য, প্রায়ই ঘটনাগুলি অস্পষ্ট রেখেছিল যখন সার্ক্যাসিয়ান দল রাশিয়ার সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। আসলে ক্ষমতা ও খ্যাতির লোভে রাষ্ট্রনেতারা এভাবেই গরীব দুঃখীদের বারংবার শোষণ করেছে। 
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শেষে আলোচনার মাধ্যমে প্যারিস চুক্তির প্রবর্তন করার জন্য ব্রিটিশ প্রতিনিধি ক্লারডেনের আর্ল, রাশিয়া ও তুরস্কের মাঝখানে কূবান নদীই সীমানা হওয়া উচিত বলে ঠিক করেন, যা রাশিয়ান শাসনের বাইরে সার্ক্যাসিয়াকে স্থান দিত, কিন্তু তাকে বিরোধীতা করে ফরাসি ও তুর্কি প্রতিনিধিরা সার্ক্যাসিয়াকে রাশিয়ান মালিকানা হিসেবে সমর্থন করে এই সিদ্ধান্তকে বাতিল করেন। ক্লারডেন তখন চুক্তিটি করার চেষ্টা করেছিলেন যে রাশিয়া সার্ক্যাসিয়াতে দূর্গ নির্মাণ করতে পারবে না, কিন্তু ফরাসি প্রতিনিধির হস্তক্ষেপে তার এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। চূড়ান্ত চুক্তিতে রাশিয়ার তরফে ঠিক করা হয় শত্রুর ক্ষমতা হ্রাস করার জন্য যুদ্ধ করবে রাশিয়া, এর পূর্বে সার্ক্যাসিয়ানরা রাশিয়ান নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল না, কিন্তু এইভাবে সার্ক্যাসিদের এখন চুক্তির দ্বারা নিষ্ক্রিয় রাশিয়ান সার্বভৌমত্ব অধীনে স্থাপন করা হয়।

প্রস্তাবনা

১৮৫৭ সালে, দিমিত্রি ম্যুলিউটিন প্রথমে সার্ক্যাসিয়ান আদিবাসীদের ব্যাপক পরিসরের বহিষ্কারের ধারণা প্রকাশ করেন। ম্যুলিউটিনের যুক্তি ও লক্ষ্য ছিল কেবল সার্ক্যাসিয়ানদের সরানো যাতে তাদের জমি উত্পাদনশীল কৃষকদের দ্বারা বসতি স্থাপন করা যায়, তিনি বলেন “সার্ক্যাসিয়ান নির্মূল করলে তারা নিজের থেকেই ধ্বংস হবে – প্রতিকূল জমি ভূগর্ভস্থ হবে।”
জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার এই পরিকল্পনা সমর্থন করেন, এবং ১৮৬১ সালে ম্যুলিউটিন যুদ্ধের মন্ত্রী হন এবং ১৮৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে ককেশাস দখল করেন (প্রথমে উত্তরপূর্ব এবং তারপর উত্তর-পশ্চিমে)। রুশ সামরিক শ্রেণির মধ্যে রাশিস্টাভ ফাদেভের মতো অন্যরা মতামত প্রকাশ করেছেন যে সার্ক্যাসিয়ানরা রাশিয়ান হতে পারেনি “পুনরায় জনগণকে শিক্ষা দেওয়া শতাব্দীব্যাপি দীর্ঘ প্রক্রিয়া” এবং রাশিয়া তার ইতিহাসের রহস্যজনক মুহূর্তে ককেশাসের অধিকার চায়, এবং তারা সার্ক্যাসিয়ানদের নির্মূল করতে চেয়ে ছিলেন। এগুলি শেষ করার জন্য ফাদেভ বলেছিলেন যে “অর্দ্ধেক সার্ক্যাসিয়ান জনগণকে তাদের অস্ত্রগুলি নিক্ষেপের জন্য বাধ্য করতে।” রাজকুমার কোচুবেইয়ের মতো বিশিষ্ট রাশিয়ান রাজনীতিকদের মধ্যে বহিষ্কৃত করার মতো আবেগ বিদ্যমান ছিল। কোচুবেই এক আমেরিকান পরিব্রাজককে বলেছিলেন “এই সার্ক্যাসিয়ানরা আপনাদের আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের মতোই – অসহ্য এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ… এবং তাদের স্বভাবগত চরিত্রের মালিক, নিষ্ঠুরতাই কেবল তাদেরকে শান্ত রাখে।” 
যাইহোক, ১৮৫৭ সালে ম্যুলিউটিনে প্রস্তাবের আগেই, ১৮৫৬ সালে ক্রিমিয়া টেটার্স ও নোগিয়াসকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং রজার ওয়েনের মতো লেখকের মতে সার্ক্যাসিয়ান নির্বাসনের সাথে সংযুক্ত ছিল। রাশিয়ান বাহিনী ১৮৫০-এর দশকের শেষের দিকে ও ১৮৬০-এর দশকের শুরুতে এবং ১৮৬০-এর দশকের শেষের দিকে সার্ক্যাসিয়াতে অগ্রসর হয়ে সার্ক্যাসিয়ানদের তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে তাদের অনুগত কসাক্সদের বসতি স্থাপন করতে চেয়েছিলেন কারণ রাশিয়ান সামরিক অভিজাতরা বিশ্বাস করেন যে সার্ক্যাসীয়দেরকে ঔ অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণরূপে বহিষ্কারই রাশিয়ান শাসনের নিরাপত্তা রক্ষা করবে। 
রাশিয়ানরা “অশান্ত” সম্প্রদায়ের থেকে পরিত্রাণ চেয়েছিল ঐ সময় এবং কোসাক্স এবং অন্যান্য খ্রিস্টানদের নিয়ে এলাকাতে বসাতে আগ্রহী ছিল। জেনারেল নিকোলাই ইয়েভডোকিমভ অটোমান সাম্রাটকে পশ্চিম ককেশীয় অধিবাসীদের বহিষ্কার করার পরামর্শ দেন। তিনি লিখেছেন যে “ক্রান্তীয় পর্বতারোহীদের পুনর্বাসন” তুরস্কদের দীর্ঘমেয়াদী কোকোয়ারিয়ান যুদ্ধকে শেষ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হবে কারণ সার্ক্যাসীয়রা “রাশিয়ান সরকারের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে মৃত্যুকে প্রাধান্য দিয়েছে।” 
অন্য দিকে, জারিস্ট কমান্ড আসন্ন রুশ-তুর্কি যুদ্ধের সময় খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে তুরস্কদের অভিবাসী হিসাবে ব্যবহার করার সম্ভাবনা সম্পর্কে খুব সচেতন ছিল। ১৮৬০ সালের অক্টোবরে ভ্লাদিকাভকাজের সাথে রাশিয়ানদের ককেশাসের কমান্ডারদের সভায় সার্ক্যাসিয়ান পুনর্বাসন পরিকল্পনা অবশেষে সম্মতি পায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার দ্বারা ১৮৬০ সালের ১০ মে অনুমোদিত হয়। 
অটোমানরা নির্বাসিতদের উৎসাহিত করার জন্য দূত পাঠিয়ে ছিলেন। অটোমানরা যেখানে খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী বেশি সেই সব অঞ্চলে মুসলমানদের অনুপাত বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। পর্বতারোহীদের “তুরস্কতে যেতে বলা হয়, যেখানে অটোমান সরকার তাদের খোলা মনে গ্রহণ করবে এবং তাদের জীবন আরও ভালো হবে।” স্থানীয় মোল্লা এবং কিছু নেতারা পুনর্বাসনের পক্ষে ছিলেন কারণ তারা রাশিয়ান প্রশাসন দ্বারা নিপীড়িত অনুভব করেছিলেন। তাঁরা ভয়ও পেয়ে ছিলেন যে পুরো রুশ নাগরিকত্ব লাভের জন্য তাদেরকে খ্রীস্টধর্ম রূপান্তরিত করা হতে পারে। উপরন্তু, স্থানীয় সর্দাররা তাদের প্রাচীন সুযোগসুবিধা এবং সামন্ততান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণ করতে আগ্রহী ছিলেন যা ১৮৬১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা অনুযায়ী রাশিয়ান সাম্রাজ্যে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছিল। বাধ্যতামূলক ভরণপোষণও এই জনসংখ্যার চিন্তার কারণগুলির মধ্যেও একটি, যদিও প্রকৃতপক্ষে তারা কখনোই সামরিক খসড়া নিয়ে আসেনি। সার্ক্যাসিয়ান প্রধানদের কাছে পুনর্বাসিত করার বিশেষ সুযোগ ছিল৷ যারা মূলতঃ আবজাক আদিবাসী ছিল, তারা তাদের লোকজনকে উত্তরের দিকে নতুন জমিতে স্থানান্তরিত করেছিল, যেখানে তারা পূর্বে বসবাস করত। আবজাক আদিবাসীদের অবশিষ্টাংশ সার্ক্যাসিয়ানরা বর্তমানের রাশিয়ায় আধুনিক আদিযী প্রজাতন্ত্রের নামধারী জাতিভুক্ত। বিভিন্ন উপজাতি থেকে অন্যান্য সার্ক্যাসিয়ান প্রধানগণও ইকতিয়িনোদর রাশিয়ান শহরে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সভা (১৮৬১) একত্রিত হন এবং কুবান ও লাবা নদী সীমারেখা থেকে ক্রিক্যাসিয়া থেকে কসাক্স ও রাশিয়ান সৈন্যদেরকে সরিয়ে দিয়ে রাশিয়ার শাসনভার গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দেন। রাশিয়ানরা সার্ক্যাসিয়ানদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। প্রধানরা তাদের পূর্বপুরুষদের জমি থেকে তাদের লোকেদের সরানোর বিষয় রাশিয়ান প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। 
১৮৫২ সালে, রাশিয়ান সরকার কর্তৃক পরিকল্পনা অনুমোদনের তিন বছর আগে রাশিয়ান কর্মকর্তারা সীমিত সংখ্যক অভিবাসীর অভিবাসনের বিষয়ে অটোমানদের সাথে আলোচনা শুরু করে৷ ১৮৬০ সালে তারা দুই পক্ষের তরফ থেকে ৪০,০০০-৫০,০০০ সার্ক্যাসিয়ান অভিবাসীর জন্য একটি চুক্তির প্রস্তাব দেয়, তারা অটোমান পক্ষের সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আগ্রহী ছিল। সেই সময়ে, কিউবান এবং এমনকি কাল্মিকের অনেক সার্ক্যাসিয়ান ততদিনে অটোমান ভূখণ্ড থেকে বহিষ্কৃত হয়ে গিয়েছিল, কারণ রাশিয়ানরা তাদের নব্য বাঙালিদের নুযাইজের বিন্যাসে বহিষ্কার করেছিল, ব্রিটিশ পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে রাশিয়ান বাহিনী বাধ্য হয়ে ১৮,০০০-২০,০০০ সার্ক্যাসিয়ান এবং নোগিয়াদের সাথে অটোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসী বা বাসিন্দাদের নোগাই এবং সার্ক্যাসিয়ান জনসংখ্যার পছন্দানুসারে ইস্তানবুল ও উস্কুয়ার শহরগুলির বাইরে প্রচুর পরিমাণে পাঠিয়ে দেয়। জরুরী ভিত্তিতে মিটিং করে 25 জুন, ১৮৬১ সালে সকীটিয়ায় সমস্ত সার্ক্যাসিয়ান উপজাতি ও উবিখাদের নেতারা মিলিত হয়ে যৌথভাবে পশ্চিমা শক্তিগুলির সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। অটোমান এবং ব্রিটিশ প্রতিনিধিদল উভয়ই স্বাধীন সার্ক্যাসিয়াকে স্বীকৃতি দেন এবং প্যারিসও স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়, সার্ক্যাসিয়ানদের একটি সুসঙ্গত রাষ্ট্র মধ্যে একত্রিত হওযার শর্তে়৷ এর প্রতিক্রিয়ায় সার্ক্যাসিয়ান উপজাতি সোচিতে একটি জাতীয় সংসদ গঠন করেন কিন্তু রাশিয়ান জেনারেল কলায়বাকিন দ্রুতই সোচিকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে দেন৷ কোনও বড় শক্তি এটি বন্ধ করার জন্য কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

বহিষ্কার


“In this year of 1864 a deed has been accomplished almost without precedent in history: not one of the mountaineer inhabitants remains on their former places of residence, and measures are being taken to cleanse the region in order to prepare it for the new Russian population.” – ককেশীয় বাহিনীর প্রধান কর্মচারী 
১৮৬২ সালে, রাশিয়ার সরকার কর্তৃক সার্ক্যাসিয়ানদের বহিষ্কারের প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয় এবং রাশিয়ান সেনারা অগ্রসর হওয়ার পর শরণার্থীদের আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। রাশিয়ান সাম্রাজ্য বা অটোমান সাম্রাজ্যের অন্যান্য অংশে ভর করে সার্ক্যাসিয়ান অভিবাসনের রাশিয়ান নীতি বাস্তবায়নে জেনারেল ইয়েভডোকিমভকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কসাক অশ্বারোহী সেনাদলকে নিয়ে রাইফেলম্যান ইয়ভডোকিমভের মোবাইল ইউনিটগুলির সাথে সার্ক্যাসিয়া ও সার্ক্যাসিয়ানদের উত্তর অঞ্চলে অনুপ্রবেশের সময় বাধা আসতে থাকে। ঐ এলাকার নদীর চারপাশে বসবাসকারী চার হাজার পরিবার তাদের ভিটে ছেড়ে অটোমান সাম্রাজ্যে চলে যায়। রাশিয়ান সামরিক অগ্রগতি এবং সৈন্যদের প্রতিহত করার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব সার্ক্যাসিয়ানরা আত্মসমর্পণকে অস্বীকার করলে সার্ক্যাসিয়ান আদিবাসীদের রাশিয়ান সেনাবাহিনীরা একের পর এক হত্যা করতে শুরু করে, হাজার হাজার লোককে হত্যা করা হয় এবং গ্রামগুলোকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়। 
১৮৬৪ সালের ২১ মে, ক্বাবাতে একটি সামরিক শিবিরে কোকেসিয়েশন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর রাশিয়ান সেনারা চিহ্নিতকরণের জন্য প্যারেড করেন। খোদজির উপত্যকায় ১৮৬৪ সালে, মাইকপে উবিখরা রাশিয়ান সৈন্যকে প্রতিহত করেছিল। যুদ্ধের সময় নারীরা গয়না নদীতে ফেলে দিয়ে যুদ্ধের অস্ত্র তুলে নেন এবং আত্মসমর্পণের চেয়ে সম্মানজনক হিসাবে মৃত্যুকেই বেছে নেন। পুরুষরাও তাদের নারীদের সাথে যোগ দেন৷ রাশিয়ান সেনাদের ভারী অস্ত্রশস্ত্র এবং আধুনিক অস্ত্র থাকার কারণে বিদ্রোহীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সৈন্যরা সমস্ত পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করে। এই ঘটনাগুলির সার্ক্যাসিয়ান ক্রনিক্যাল সংবাদপত্রে সার্ক্যাসিয়ানদের মৃতদেহকে “swam in a sea of blood” বা “রক্তের সমুদ্রের মধ্যে ঝাঁপ” হিসেবে বর্ণনা করা হয়। সোচির কাছাকাছি গভীর গিরিখাত ক্বাবাদে, সার্ক্যাসিয়ান বাহিনী এবং কিছু আবখাজ মিত্ররা ১৮৬৪ সালের মে মাসে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের শেষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। এই স্থানটি রাশিয়ান ভাষায় ক্রাসনায়া পলিয়ানা বা “red meadow” নামে পরিচিত, যেখানে রক্ত ফিনকি দিয়ে পরে রয়েছে, সেই স্থানটি ১৮৬৯ সালে জাতিগত রাশিয়ানরা পুনরুদ্ধার করেন। ১৮৬৪ সালে চূড়ান্ত যুদ্ধের শেষে, সার্ক্যাসীয়দের দলকে সোটিতে পাঠানো হয়, যেখানে তারা তাদের নির্বাসনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন৷ এই সময়ে হাজার হাজার মানুষ মারা যান নির্বাসনের আগেই। যদিও কিছু সার্ক্যাসীয়রা কিছুজন অটোমান সাম্রাজ্যে পায়ে হেঁটে পৌঁছেছিল, আর অধিকাংশরা গিয়েছিল সমুদ্রের মধ্য দিয়ে৷ রাশিয়ার বাহিনীর জন্যই অবশ্যম্ভাবী ভাবে কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলিতে মধ্যে দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। রাশিয়ান সেনাপতিরা এবং গভর্ণররা সতর্ক করে দিয়ে ছিলেন যে যদি ছেড়ে যাওয়ার আদেশ না মানা হয় তবে আরও বাহিনী পাঠানো হবে। 
জনসংখ্যাগত পরিবর্তন হয় ব্যাপক হারে এবং তার প্রভাব পড়ে গোষ্ঠীতেও৷
তুরস্কে যে প্রধান প্রধান জাতি মানুষের গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে আদিগি, উবাইখস, মুসলিম আখজিয়ানরা ছিলেন। সার্ক্যাসিয়ানদের নির্বাসনে এদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। শাপসুগ আদিবাসীরা যারা ৩ লাখ থেকে ৩০০০ জনে পরিণত হয়েছিলেন তারা বন ও সমভূমিতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৪০ জন শাপসুগ যারা বাকি পরে ছিল তাদের সাইবেরিয়া পাঠানো হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে, রাশিয়ান সরকারের নিজস্ব আর্কাইভের সংখ্যা এবং অটোমানদের হিসাবে গণনা করা হয়েছিল সার্ক্যাসিয়ান জাতির ৯৫-৯৭% হ্রাস পেয়েছে। উবেখের কিছু (কিন্তু সবটা নয়) জনসংখ্যার পাশাপাশি সার্ক্যাসিয়ান (আদিগি) মানুষের বিভিন্ন প্রধান উপবিভাগ, এই কার্যক্রমের সময় লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে, যুদ্ধের আগে এবং অপসারণে পাঁচ বছর পরে জনসংখ্যার নিম্নরূপ গণনা করা হয়েছিল:
যদিও সার্ক্যাসিয়ানরাই প্রধানত (এবং সব থেকে খারাপ ভাবে হত্যার শিকার) এই গণহত্যা ও নিজের জন্ম ভিটের থেকে বহিষ্কারের শিকার হয়েছিলেন, তবে তারা ছাড়াও এই অঞ্চলের অন্যান্য জনগোষ্ঠীকেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। এটি অনুমান করা হয়েছিল যে ১৮৬৫ সালে আশি শতাংশ ইঙ্গুশ এই ইঙ্গুশিয়ার অঞ্চল ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে বাধ্য হয়। নিম্নভূমির চেচেনরাও বিপুল পরিমাণে বহিষ্কৃত হয়। দীর্ঘকাল চেচেন নিম্নভূমিতে কম সংখ্যক মানুষের বাস করার পরে ১৯৪৩-১৯৫৭ পর্যন্ত সময়ে সাইবেরিয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করে এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। এই সময় আর্শটিন নামক আরেক সম্পূর্ণ আলাদা গোষ্ঠীও (পৃথকভাবে) ধ্বংস হয়েছিল। সরকারি নথি অনুযায়ী, ১৩৬৬তে প্রায় সব আর্শটিন পরিবার অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল (অর্থাৎ পালিয়ে যায় বা হত্যা করা হয়) এবং শুধুমাত্র ৭৫টি পরিবারই রয়ে যায়। উপরন্তু, ১৮৬০-১৮৬১ সালে রাশিয়ান সেনাবাহিনী মধ্য ককেশাসে ভূমিগুলিতে উচ্ছেদ করেছিল, যার ফলে প্রায় ১০,০০০ কবারদিন, ২২,০০০ চেচেন এবং অতিরিক্ত বেশ কিছু সংখ্যক মুসলিম ওসেটিয়িয়ানদের উচ্ছেদ করা হয় ও তাদের তুরস্কে যেতে বাধ্য করা হয়। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ককেশাসে, কারওয়ান এবং বাল্কারদের মতো দুটি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে এই প্রক্রিয়ার সময় বিপুল পরিমাণে নির্বাসিত করা হয়নি। এদিকে, আবখাজিয়া, তার জনসংখ্যার অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়, উনিশ শতকের শেষের দিকে। 
এই প্রক্রিয়াগুলির অংশ হিসাবে অ-সার্ক্যাসিয়ান জনগণের ভিটে থেকে উচ্ছেদ করা হয় বলেই বেশিরভাগ সূত্র ঘোষণা করেন। অধিকাংশ সূত্র উবিখরাও বর্বরতা এবং গণহত্যার অন্তর্ভুক্ত বেশিরভাগ লোককে ভিন্ন ভাষা সত্ত্বেও সার্ক্যাসিয়ান জাতিগত অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং আবজিন জনগোষ্ঠীর মতো জাতিগত সার্ক্যাসিয়ান জনগোষ্ঠীর প্রতিবেশির বিরুদ্ধেও একই আচরণ করা হয়৷ আবার কিছু তথ্যসূত্র বলে তার ভিতর কিছু সংখ্যায় আবখাজরাও অন্তর্ভুক্ত, অন্য তথ্যসূত্রগুলি চেচেনীয়, ইঙ্গুশ, আরশিন্স ও ওসেটিয়ান আদিবাসীদেরও কাবার্ডিন জনসংখ্যার সাথে বহিষ্কার করার সময় একত্রেই অন্তর্ভুক্ত করেছে। নোগাইয়াদেরও অনেকে এই সময় বহিষ্কার করা হয়েছিল বলেই মনে করেন। ১৮৬১ সালের ইয়েভডোকিমভের আদেশ অনুসারে সার্ক্যাসিয়ানদের (উবেখরা সহ) নোগাইয়া এবং আববাসকে জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। শেনফিল্ড যুক্তি দিয়েছেন যে সেই দুর্যোগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সম্ভবত এক লাখেরও বেশি ছিল, সম্ভবত পনেরো লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।

Leave a Reply

error: Content is protected !!