হরফ লিপির পরম্পরা

0

সোমাদ্রি সাহা

মানুষ হৃদয়কে সৌন্দর্যচেতনাই সত্যানুসন্ধানের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই সত্য খোঁজার পথেই পরবর্তীতে ‘আরো ভালো’-র এক পরম্পরা তৈরি হয়। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সাথে সাথেই খরচ সাপেক্ষ ভাল জিনিস পাওয়ার লক্ষ্যে ভাবনা, চেষ্টা ও বহু বছরের প্রচেষ্টার সঞ্চারণে সৃষ্টি হয় পরম্পরা।

স্মৃতি-বিস্মৃতি
মুদ্রণ বা ছাপা খানার ক্ষেত্রেও এই পরম্পরার ইতিহাস আমাদের কাছে চির পরিচিত। সনাতন ধর্মের শ্রুতি শিক্ষা থাকলেও ঋকবেদ, উপনিষদ, পুরাণ রচয়িতা মুনিঋষিগণ তা তালপাতায় লিখে রাখতেন। পরবর্তীকালে অনেকেই বুঝতে পারেন তা ছাপা অক্ষরে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। স্মৃতি-বিস্মৃতি হতেই পারে, তাই তার যথাযথ নথিভুক্তকরণ ইতিহাসের সাক্ষী করবে।
আদিম মানুষের গুহাচিত্রের খোদাই থেকে আমরা ভাবপ্রকাশ করছি, সুমেরু সভ্যতা বা ভারতবর্ষের ইতিহাসে সিন্ধু সভ্যতায় তা খোদাই করা শিলালিপি, অশোকের বাণী সম্বলিত শিলাস্তর, মিশরের হাইরোগ্লিফিক্স লিপি, বিশ্বের নানা প্রকারের মুদ্রার অলংকরণ স্পষ্ট করে দেয় মুদ্রণের ইতিহাস বহু প্রাচীন। অর্থাৎ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ ৩৫০ প্যাপিরস থেকে পৃষ্ঠার আবিষ্কারের পর থেকেই এই ইতিহাসের পরম্পরা।
দ্বিতীয় শতকে চীনারা রেশমের কাপড়ে ফুলের ছার দেওয়ার জন্য কাঠের ব্লক তৈরি করতেন। চতুর্থ শতকে কাপড়ের উপর কাঠের ব্লকের সাহায্যে মিশর দেশে ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। চীনারাই সপ্তম শতাব্দীতে কাগজের উপর ছাপা শুরু করে। তারাই প্রথম ৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ‘ডায়মন্ড সূত্র’ নামক পুস্তক ছেপেছিলেন। প্রথম চলন্ত ছাপার ব্যবস্থা ১০৪০ খ্রিস্টাব্দে পি সেং আবিষ্কার করেন। এই মুদ্রণ যন্ত্রটি ধাতুর টাইপ দিয়ে তৈরি হওয়ার ফলে খুব সহজে দক্ষতার সাথে ছাপার কাজ করা যেত। যদিও তা চিনামাটির উপর ছাপা হত এবং তা অসাবধানতায় ভেঙেও যেত। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে কোরিয়ানরা ধাতুর ধরনের চলন্ত মুদ্রণ যন্ত্র বানালেন টাইপকাস্টিং পদ্ধতিতে মুদ্রা ঢালাই করতে পারত।
আমরা জানি যথাযথ মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার হয়েছিল ১৪৫২খ্রীঃ জোহনেস গুটেনবার্গের প্রচেষ্টায়। শিল্প বিপ্লবের সময়পুস্তক, সংবাদপত্র, সাময়িক পত্রিকা এবং অন্যান্য পঠন সামগ্রীর জন্য মুদ্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সেই সময় শুধুমাত্র খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচার করার জন্য বাইবেল ছাপার জন্য গুটেনবার্গ ব্রতী হয়েছিলেন। জার্মানির মেইনজ শহরে তিনি স্বর্ণ শিল্পের কারিগর ছিলেন, রত্নও কাটতেন। তিনিই প্রথম টিন, শিসা (লেড) ও অ্যান্টিমণির মিশ্রণে যে ধাতুকল্প সৃষ্টি করলেন যা মুদ্রণে বিশেষ সহায়তা করত। এই ধাতুকল্পটি কম তাপমাত্রায় গলে যায় তাই তার থেকে ঢালাইয়ের ছাঁচ বানানো ও মুদ্রণের ছাপাখানার জন্য। ব্যতিক্রমী এক সৃষ্টি। গুটেনবার্গ প্রতিটি অক্ষরের প্রতিবিম্ব অক্ষরের ব্লক বানালেন। সেই হরফের ব্লকগুলি বসিয়ে শব্দ গঠন করা হত। ১৪৫২ সালে তিনি গুটেনবার্গের বাইবেল তৈরি করার কাজ শুরু করেন এবং ১৪৫৫ সালে ২০০ টি বইয়ের কপি প্রস্তুত করেন, ১৪৫৫ সালে। ফ্রাংফুট মেলাতে তা বিক্রিও করেন। এই অনবদ্য আবিষ্কার ইউরোপে যুগান্তকারী এক কর্মযজ্ঞ তৈরি করে এবং প্রচুর মুদ্রণের দোকানের সাথে সাথেই প্রিন্ট করার উপকরণের চাহিদা বৃদ্ধি করে।
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের অল স্ট্যানহোপ-এ ‘কাস্ট আইরন প্রিন্টিং প্রেস’ তৈরি করেন যা আরো স্পষ্ট ছাপার অক্ষর তৈরি করতে পারত। পরবর্তীতে এই ভাবেই উন্নতির পরম্পরার হাত ধরে কলম্বিয়ান প্রেস, বেড-অ্যান্ড-প্ল্যাটেন প্রেস, সিলিন্ডার প্রেস, রোটারি প্রেস, বুলক প্রেস, লিনোটাইপ মেশিন, মনোটাইপ মেশিন, ডিজিটাল প্রিন্টিং মেশিন, অফসেট মেশিন, জেরক্স অফসেট মেশিন, ওয়েব অফসেট মেশিন প্রভৃতির প্রসার লাভ ঘটেছে। আধুনিক কালে কম্পিউটারের সহায়তায় অনেক বেশি পরিমাণে ছাপাখানার উন্নতির সাথে এখন সকলেই পরিচিত।

ভারতের পথে
ভারতবর্ষে মুদ্রণশৈলী প্রথম প্রবেশ করেছিল গোয়া শহরে। ৩০ এপ্রিল ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে, লয়েলা-র সেন্ট ইগনাসিয়াস-র একটি চিঠিতে জানা যায় তার পিতা গাসপার ক্যালেজা পর্তুগাল থেকে অ্যাবিসিনিয়ার জন্য জাহাজে করে একটি প্রিন্টিং প্রেস সেটিং নিয়ে এসেছিলেন। অ্যাবিসিনিয়ানদের সাহায্য করার জন্য এই প্রেস তৈরির কথা হয়েছিল। ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে তামিলনাড়ুতে ফ্রান্সিস জেভিয়ার থারাংগাবাদী (Tranquebar) বাইবেল পড়াতেন। পর্তুগালের জোয়ান তৃতীয় পক্ষ থেকে গোয়া ভাইসরয় ভারতীয়দের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এছাড়াও অ্যাবিসিনিয়া (ইউথোপিয়া) সম্রাট মিশনারী সহ প্রেস প্রতিষ্ঠা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তার সাথেই ছিলেন জোয়া নুনেজ ব্যারেটো ও তার প্রিন্টিংয়ের দল। দলটি উত্তমাশা অন্তরিপে যাওয়ার সময় গোয়ায় নোঙর করেন। অ্যাবসিনিয়ার সম্রাট তখন মিশনারীদের তেমন অভ্যর্থনা না জানালে, ক্রের্জি যিনি গোয়াতে প্রেস কতটা জরুরী বুঝতে পেরেছিলেন তিনি গর্ভনর জেনারেলের তত্ত্বাবধানে গোয়াতে তা প্রতিষ্ঠা করেন। ইউরোপের বাইরে মেক্সিকোর ‘লিসা’-তে প্রথম প্রেস প্রতিষ্ঠার পর গোয়াতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

বাংলার শুরুর কথা
জেমস অগাসটাস হিক্কি ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ক্যালকাটা প্রেস’ তৈরি করেন। সেই বছরেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাকে মিলিটারি বিল ও বাট্টা ফর্ম ছাপার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। অনেক সময় সেই ছাপা তিনি ছেপে শেষ করতে পারতেন না তাই কর্মচারীদের সাথে বাকবিতন্ডা হত। তবুও ১৭৮০ সালে তিনি সাপ্তাহিক ‘হিক্কি’স বেঙ্গল গেজেট’ সংবাদপত্রটি প্রকাশ করেন।
সুইডিশ জন জাকারিয়া কারণি আল্ডার বাংলার প্রথম প্রোটেস্টান্ট মিশনারী। তিনি Society for Promoting Christian knowledge নামক প্রথম মেশনারী প্রেস তৈরি করেন, ১৭৮০ সালে ‘ক্রিশ্চান কম্পনিয়ান’ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে তার হিক্কির সাথে মামলা মোকদ্দমা হয়। ১৭৮০ সালে বানার্ড মেসনিক তার সঙ্গী পিটার রিড-এর সাথে ইন্ডিয়া গেজেট প্রকাশ করেন। বাংলার মুদ্রণের ক্ষেত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাম চালর্স উইলকিন্স। যিনি ১৭৭০ সালে ভারতে এসেছিলেন, তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর লেখক ছিলেন কিন্তু ফার্সী, সংস্কৃত ও বাংলায় বিশেষ দক্ষ ছিলেন। ১৭৭৮ সালে তৎকালীন গর্ভনর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস তাকে দায়িত্ব দেন এন. বি. হালহেড-এর ‘A Grammar of the Bengali Language’ বাংলা টাইপ সেট করার জন্য বলেন। হিক্কির সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চুক্তিবদ্ধ প্রিন্টিং-এর তুলনায় উইলকিন্স-কে ১৭৭৮ সালে ‘কোম্পানি প্রেস’-এ সুপারিনটেডেন্ড হিসাবে নিযুক্ত করেন। প্রেসটি মালদায় স্থাপন করা হয়। প্রখ্যাত জেম অ্যান্ড সিল যোসেফ শেফার্ড, তার সাথে মুদ্ৰক পঞ্চানন কর্মকারকে নিযুক্ত করেন। তিনি ডিজাইন ও টাইপ কেটে, ঢালাই করতে সহায়তা করতেন।
১৮০০ খ্রিস্টাব্দের পরে শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস এবং ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ একত্রে বাংলার প্রিন্টিংয়ের কাজ করেন। ব্যাকরণ বই, বাংলা ব্যাকরণ সহ গদ্য এবং পাঠ্য বই ছাপা হরফে শুরু হয়।

বাংলার বাইবেল কথা
প্রথমে কেরি সাহেব, পঞ্চাননের থেকে হরফ কিনে ছাপার কাজ শুরু করেন। ১৮০৩ সালে সংস্কৃত ব্যাকরণ বই প্রকাশ করবেন, যার জন্য দেবনগরি ৭০০ ভিন্ন পাঞ্চের প্রয়োজনীয়তা ছিল। তাই কেরি সাহেব পঞ্চানন ও পরে সহকারি হিসাবে মনোহরকে নিযুক্ত করেন। পরবর্তিতে এখানেই টাইপ ফউন্ড্রি গড়ে উঠেছিল। মনোহর বাংলা, নাগরি, ফারসি ও আরবি ভাষার খুব সুন্দর হরফ তৈরি করেন। এই হরফ তৈরি চিনেদের ধাতুর হরফের থেকে কম খরচেই পাওয়া যেত। এখানেই ১৮০৯ সালে বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের সহায়তায় কাগজ উৎপাদনের কাজ চালু হয়।
এখানেই ১৮ মার্চ, ১৮০০ সালে প্রথম বাইবেল অনুবাদের প্রুফ দেখা হয়। সেই বছরই আগস্ট মাসে গোসপেল ও ম্যাথিউ মঙ্গল সমাচার সমাপ্ত করেন। নয় মাসের মধ্যে সেই বই ছাপার কাজ শেষ হয়। ১৮০৪ সালের মধ্যেই বাইবেল বাংলা, ওড়িয়া, হিন্দুস্থানী ও সংস্কৃততে ছাপা হয়। ১৮০৪ সালের শুরুতে মিশনারি ঠিক করেন বাইবেল বাংলা, হিন্দুস্তানি, মারাঠি, তেলেগু, কর্ণাটকী, ওড়িয়া ও তামিল ভাষা অনুবাদ করবে। পরবর্তীতে বার্মি হরফও তৈরি হয়। তেলেগু, কর্ণাটকী, মারাঠি, শিখ ও পারসি ভাষায়ও বাইবেল ছাপা হয়। ১৮১১ সালে নিউ টেস্টামেন্ট চাশমির ভাষায় ছাপা হয়।
১৮১২ সালে ১১ মার্চ এই প্রেসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় সেই সময়ের ৭০,০০০ টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল। বিভিন্ন নথি, হিসাবনিকাশের কাগজ, পান্ডুলিপি, ১৪ রকমের পূর্বাঞ্চলিয় টাইপ, ১২০০ রিম কাগজ ও অন্যান্য কাঁচামাল সহ বহু কাজের অনুবাদ যেমন রামায়ণ, অভিধানের পান্ডুলিপি, বহুভাষিক অভিধানের পাণ্ডুলিপি, তেলেগু ব্যাকারণে ব্লু প্রিন্ট এই সময় পুড়ে যায়।
সেন্ট ম্যাথিউয়ের সহযোগিতায় ১৮১৬ সালের মার্চ মাসে কুনকুনা, মুলতানি, সিন্ধী, বিকানির, নেপালি, উদয়পুর, মারওয়া, জুইপোর, খাসি ও বার্মা ভাষার কাজ শেষ হয়। ১৮১৮ সালে আসামি ভাষার নিউ টেস্টামেন্ট ছাপা হয়। ১৮৩০ সালে পোস্তু ও গুজরাতি ভাষায় কাজ অনুবাদ করার প্রক্রিয়া শেষ হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় বাইবেল ঐ সময়ে অনুদিত হয়। শ্রীরামপুর কলেজের ভাইস প্রোভাস্ট মিস্টার বুচানন কেরি সাহেবকে মি. লেসারের কাছে চিনা ভাষা শিখতে বলেন। কেরি সাহেব মি. মার্সম্যানকে এই কাজে নিযুক্ত করেন। ১৮২২ সালে এখানে চিনা ভাষায় নিউ টেন্টামেন্ট চলন্ত ধাতব টাইপে ছাপার কাজ শেষ করা হয়।

বাইবেল ছাপার অর্থকরি মূল্য
শুরুর দিকে কেরি সাহেবের অর্থসংস্থানের অসুবিধাতে পড়তে হয়েছিল। ১৭৯৫ সালে ইংল্যান্ডে বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট ছাপার জন্য ৪৩,৭৫০ টাকা দরকার তা লিখে পাঠান, যা না পাওয়ায় প্রথম দিকের কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়। পরে ঠিক করা হয় কলকাতা নিবাসী প্রতিটি ইংরেজ বসবাসকারীকে ২টি সোনার মোহরের বিনিময় বাইবেল কিনতে হবে। এই কর্মকাণ্ড থেকে ১৫০০ টাকা উঠেছিল। ১৮০৪ সাল থেকে, প্রতি বছর ইংল্যান্ডের ইংরেজ সমাজ থেকে সংগৃহীত ১০,০০০ টাকা এদেশে আসতে শুরু করে। পরবর্তীতে বাইবেল জনপ্রিয় হওয়ার পরে ও বিক্রি বেড়ে যাওয়ার পর এই অর্থ মিশনের কাজে দেওয়া হয়।

আঞ্চলিক ভাষায় মুদ্রণ
বাইবেল ছাড়াও এখানে প্রাদেশিক বই মুদ্রণের বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছিল। ১৮০১ সালে কেরি সাহেবের তত্ত্বাবধানে রাম বসু রাজা প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস প্রকাশ করেন। এটি প্রথম বাংলা গদ্য মুদ্রিত সাহিত্য। ১৮০৪ সালের শেষের দিকে প্রথম সংস্কৃত ভাষায় রচিত হিতোপদেশ প্রকাশিত হয়ে। ১৮০৬ সালে সংস্কৃত রামায়ণের গদ্য অনুবাদ ও তার ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন কেরি ও মার্শম্যান। তারা রামায়ণ ও মহাভারতের পুরোটাই অনুবাদ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তা সমাপ্ত করতে পারেননি।
১৮১২ সালে সংস্কৃত, হিন্দি, মারাঠি ও উড়িয়া ভাষায় ইতিহাসের বই মুদ্রিত হয়। ১৮৩২ সালে আসামী ও কাশ্মীরি ভাষায় ইতিহাসের বই প্রকাশিত হয়েছিল।
১৮০১ সালে কেরির সম্পাদিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বইটি প্রকাশিত হয়। ১৮২৫ সালে কেরি তিনটি সংখ্যায় বাংলা অভিধান প্রকাশ করেন।

বিবিধ মুদ্রণ
অন্যান্য বইও প্রকাশিত হয়েছিল তার মধ্যে ১৮০২ সালে বুটরেশ্ব-সিংহাসন, যাতে সংস্কৃত মুগ্ধবোধ ও হিতপদেশের বাংলা অনুবাদ করা হয়। পরে রাজা ভুলি, ১৮১৮ সালে গুরুদক্ষিণা এবং বাংলায় অনুবাদ করা সংস্কৃত কবিতাগুচ্ছ প্রকাশিত হয় কবিতা রত্নাকর। ভুটানি ভাষায় অভিধান ও ব্যাকরণের বই প্রকাশিত হয় ১৮২৬ সালে। অবশ্য এর অনেক আগেই ১৮১০ সালে বার্মা, মালয় ও থাই ভাষার উপর কম্পারেটিভ ভোকাবুলারি প্রকাশ করা হয়। ১৮০৯ সালে কনফুসিয়াসের প্রাচীন চিনা লেখা সহ অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ভৌগোলিক চুক্তি গোলোধ্যায় প্রকাশিত হয়। ১৮২১ সালে সংখ্যা পূর্বাচনা ভাষায়-এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
টুকিটাকি অজানা
এই প্রেসে ১৮০০ থেকে ১৮৩২ সালের ভিতর ২,১২,০০০ বই ছাপা হয়েছিল। এখানে বাইবেলে অনুবাদ ছাড়াও ব্যাকরণের বই, অভিধান, ইতিহাস, প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্বের উপর প্রবন্ধ, নীতি কথা ছাপার এক বিশাল কর্মযজ্ঞ গড়ে উঠেছিল। শ্রীরামপুর প্রেস ঠিক করেন সর্বসাধারণের জন্য বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ করবেন। তারা মাসিক পত্রিকা দিকদর্শন প্রকাশ করা শুরু করেন। তার দ্বিভাষিক ও বাংলা সংস্করণও করা হয়েছিল। শ্রীরামপুর প্রেসেই ৩১ মে, ১৮১৮ সালে বাংলা সংবাদপত্র সমাচার দর্পণ ও সাময়িকী ছাপা শুরু হয়। প্রায় ৪৫টি দক্ষিণ এশিয় ভাষায় এখানে ছাপা হত। এই প্রেসের দেনার দায়ের দরুন ১৮৩৭ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়, প্রেসটি বাপিষ্ট মিশন প্রেসের সাথে যুক্ত করা হয়। কিন্তু এই প্রেস চলতে থাকে। ১৮৪৫ সালে, ডেনমার্কের রাজা প্রেসটি ব্রিটিশকে স্থানান্তর করেন। তবুও ১৮৫৪-৫৫ সাল নাগাদ এই প্রেস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কারণ ইংরেজরা এতদিনে বুঝতে পারেন দেশীয় ভাষায় শিক্ষা দিয়ে শিক্ষিত করায় তাদের নিজেদের কতটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

কলকাতার ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস
‘কলকাতার ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস’-এর উৎপত্তি ওই শ্রীরামপুর মিশন থেকেই। উইলিয়ম কেরি প্রথম থেকেই বড়ো মাপের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। বেশ কয়েক জন উজ্জ্বল মেধা ও কর্মঠ সহযোগীর সাহায্যে অল্প কালের মধ্যেই শ্রীরামপুর মিশন একটি বড়ো মাপের মিশনারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। কিন্তু এক সময়ে তাদের মধ্যেও বিরোধ দেখা দেয়। মূলত প্রবীণদের সঙ্গে মত পার্থক্যের কারণে উইলিয়ম হপকিনস পিয়ার্স, উইলিয়ম ইয়েটস, জন লসন, ইউস্টেস কেরি প্রমুখ নবীন মিশনারিরা ১৮১৮-এ শ্রীরামপুর ছেড়ে কলকাতায় এসে নতুন মিশন প্রতিষ্ঠা করলেন। নতুন হলেও কাজকর্মের ধারা শ্রীরামপুরের মতোই ছিল। বই ছাপাকে তারাও খ্রিস্টধর্ম প্রচারের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে উদ্যোগী হল। প্রতিষ্ঠার বছরেই সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে একটি খ্রিস্টীয় নীতিগ্রন্থ দিয়ে শুরু হয় কলকাতা ব্যাপটিষ্ট মিশন প্রেসের কাজকর্ম।
শহরের একদিকে বাঁশের খুঁটি আর খড়ের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট একটি কুটিরে মাত্র দুই ফাউন্ড টাইপ আর পুরোনো একটি কাঠের ছাপাই মেশিন দিয়ে আরম্ভ হওয়া ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস কুড়ি বছরের মধ্যে সঞ্চয় করে ফেলে বাষট্টি ফাউন্ড টাইপ আর সাতখানা লোহার ছাপার যন্ত্র। এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। হুগলি-শ্রীরামপুরের দেখাদেখি কলকাতা শহরেও তখন ছাপাখানা বসানোর উদ্যোগ আরম্ভ হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কলকাতার ছাপাখানার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গর্ভনমেন্ট গেজেট প্রেস (মিশন রো), ফেরিস কোম্পানির প্রেস (বউবাজার), হিন্দুস্থানী প্রেস (লালবাজার), হরচন্দ্র রায়ের বাঙালী প্রেস (চোরবাগান), লাল্লুলালের সংস্কৃত প্রেস (পটলডাঙা) ইত্যাদি। জনসাধারণের মধ্যে তখনও সার্বিক ভাবে ইংরেজি শিক্ষা চালু না হলেও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা আস্তে আস্তে আসছিল। ঐ সময়ে একে একে স্থাপিত হচ্ছে আড়পুলি পাঠশালা (হেয়ার স্কুল), হিন্দু কলেজ, সংস্কৃত কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সন্ধিক্ষণে পুথির যুগ কেটে গিয়ে পুস্তকের যুগ। আরম্ভ হওয়ায় সূচনাকাল হিসেবে বই ছাপার ব্যবসা বাড়তে থাকে। এই সময়েই শহরের প্রান্তদেশে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেসের আর্বিভাব। রামমোহন রায়ের কয়েকটি বই এই প্রেস থেকে ছাপা হলেও রামমোহনের খ্রিস্টধর্ম বিষয়ক কিছু লেখায় মিশনারিরা তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু ওয়ার্ড, মার্শম্যানদের সঙ্গে তার বিরোধ তুঙ্গে উঠলেও উইলিয়ম অ্যাডম নামে এক মিশনারি রামমোহনের যুক্তিনিষ্ঠায়। আকৃষ্ট হয়ে ব্যাপটিস্ট মিশন ত্যাগ করে ইউনিটারিয়ান সোসাইটি স্থাপন করলেন। শেষ পর্যন্ত ১৮২৩-এ রামমোহনের Final Appeal to the Christian Public বইটি ছাপতে অস্বীকার করে। ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস। তবে রামমোহনও দমবার পাত্র ছিলেন না। উইলিয়ম অ্যাডমকে সঙ্গে নিয়ে ধর্মতলায় ইউনিটারিয়ান প্রেস স্থাপন করে সেখান থেকে বই ছাপাতে আরম্ভ করেন।
শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেসের সূচনাটা ভালো হলেও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৮১২-য় এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রেসের প্রচুর ক্ষতি হলেও সে সময় তা সামলানো গিয়েছিল। কিন্তু ১৮১৮ ভাঙন এবং তারপর নানা বিপর্যয়ের ফলে ১৮৩৭-এ শ্রীরামপুরের মিশন প্রেস কলকাতার ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেসের সঙ্গে মিশে যায়। বাংলার মুদ্রণযুগের ইতিহাস নিয়ে যারা কাজ করেছেন, তাদের অনেকের মতে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছাপাখানা। ধর্মপুস্তক ছাড়াও স্কুল বুক সোসাইটির বই ও অন্যান্য পাঠ্যপুস্তক ছাপায় এই প্রেস ছিল অগ্রগণ্য প্রতিষ্ঠান বিশেষ। একই প্রাঙ্গণে চল্লিশটি ভাষার টাইপ ঢালাই, কম্পোজ, ছাপা, বাঁধাই সবই হত এই ছাপাখানায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার থেকে এই ছাপাখানা চলেছিল বিংশ শতাব্দী দ্বিতীয়ার্ধ বা আরও স্পষ্ট করে বললে, ১৯৭০-এর মার্চ মাস পর্যন্ত। একশো বাহান্ন বছরের ওই প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের মাথায় লেখা থাকত, ‘PRINTERS IN FORTY LANGUAGES’।
কলকাতা শহরের তৎকালীন প্রান্তদেশের ওই ছাপাখানা ব্যাপটিস্টমিশন প্রেস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেই জমিতে তৈরি হয়েছিল অধুনালুপ্ত অমৃতবাজার পত্রিকা ও যুগান্তর পত্রিকা গোষ্ঠীর ভবন। সাবেক লোয়ার সার্কুলার রোড আর ইলিয়ট রোডের সংযোগস্থলে অবস্থিত বাড়িটির বর্তমান ঠিকানা ৪১এ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড, কলকাতা ৭০০০১৭। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি। ওই পত্রিকা দু’টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ দিন বাড়িটি অব্যবহৃত পড়ে ছিল। সম্প্রতি বাড়িটির নতুন নামকরণ হয়েছে ডায়মন্ড প্রেস্টিজ।

অন্যদিকের ধারা
পরবর্তীতে সাধারণত লেটার প্রেসের ছোট ছোট ছাপাখানা তৈরি হয়। তাতেই কালজয়ী বাংলা বই বহুল সংখ্যক মুদ্রণ হয়। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী প্রেসের ছাপানো বই আজও আমাদের কাছে সর্বজন চর্চিত। সেই সময় থেকে বিদেশের টাইমস, অক্সফোর্ডের মতন নামী সংস্থাও বাংলায় নিজেদের প্রেস স্থাপন করে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় সেই লেটার প্রেসের নানা প্রকার মেশিনের ছাপাতেও পরিবর্তন আসে। পরিশেষে আসে অফসেট মেশিন। কম খরচের কাজের জন্য ব্যবহৃত হয় জেরক্স অফসেট মেশিন।

ভারতবর্ষের মুদ্রণের পরম্পরা
ভারতবর্ষের ইতিহাস ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো উপকূলবর্তী অঞ্চল জুড়ে এই মুদ্রণ প্রক্রিয়াটি চালু ছিল। গোয়া, কোচিন, পুদিকোলি, ভাইপিকোঠা, অম্বাদালাকাদ, ট্রাংকুইবোর, মাদ্রাস, ফোর্ট উইলিয়াম কলকাতা এবং শ্রীরামপুরে প্রেসের অবস্থান পাওয়া যায়। নিম্নলিখিত ক্রমপর্যায়ে আমরা ভারতবর্ষের মুদ্রণে ইতিহাসে বিশেষ বিশেষ মাইস্টোনগুলি একবার দেখেনি।

১৫৭৯ – কোচিন প্রিন্টিং।
১৭১২ – ট্রাংকুইবোর প্রেস।
১৭৫১ – ট্র্যাংকুইবোর প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস, মাদ্রাস।
১৭৬১ – ভেপরি এসপিসিকে প্রেস।
১৭৯৫ – শ্রীরামপুর মিশনারিস।
১৮০৯ – পাঞ্জাবী প্রেস, লুধিয়ানা।
১৮১৭ – আমেরিকান মিশন প্রেস, বম্বে।
১৮২০ – ন্যাটিভ স্কুল এবং স্কুল বুক কমিটি, বম্বে।
১৮২০ – বিহার লিথোগ্রাফি, পাটনা।
১৮২২ – বম্বের কুরিয়ার প্রেসে পাম্পকোপা খায়ানা-তে প্রিন্টিং শুরু হয়।
১৮২৫-২৬ – গুজরাটী, হিন্দুস্থানী ও পার্সিতে প্রিন্টিং শুরু হয়।
১৮২৯ – ফাদার বেঞ্জামিন বেইলি-র প্রথম কোট্টায়ামে প্রিন্টিং প্রেস।
১৮৩০ – ক্যাপ্টেন জর্জ জার্ভিস পুণাতে লিথোগ্রাফিক প্রেস গড়ে তোলে।
১৮৩০ – কানপুরে গ্রিনওয়ে ফ্যমিলি প্রেস (হিন্দি লিথোগ্রাফিক কাজ)।
১৮৩০ – লিথোগ্রাফিক প্রেস, মাদ্রাস প্রেসিডেন্সি।
১৮৩১ – ফোর্ট, সেন্ট জর্জ প্রেস অ্যান্ড কলেজ, মাদ্রাজ।
১৭৯৯-১৮৩৩ – সারাফোজি মহারাজা প্রেস, তাঞ্জোর।
১৮৩৮ – পাঞ্জাবি প্রেসে গুরুমুখী ব্যাকরণ মুদ্রিত হয়।
১৮৪১ – মারাঠী সাপ্তাহিকী প্রভাকর প্রিন্ট করার জন্য বহু মহাজন লিথো প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৪৩ – মাসিক উপদেশ চন্দ্রিকা, পন্ডিত দান্তেকর সম্পাদিত, মহাজন প্রেস।
১৮৪৪-৪৮ – দ্য দিল্লি উর্দু আখবর, দিল্লি ১৮৪৪ – ৪৮।
১৮৪৯ – বেনারস আখবর প্রেস, নাগারি হরফে মুদ্রিত হয়।
১৮৫০ – ধুমকেতু সাপ্তাহিকী মহাজন প্রেসে মুদ্রিত হয়।
১৮৫১ – ইংরেজি-পাঞ্জাবি অভিধান, পাঞ্জাবি প্রেস-এ মুদ্রিত হয়।
১৮৬১ – টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রেস, বম্বে।
১৮৬৬ – কটক প্রিন্টিং কোম্পানিতে প্রথম উড়িয়া সাপ্তাহিকী ছাপা হয়।
১৮৭২ – কর্ণাটক স্টেট প্রেস।
১৮৭৭ – কর্মাশিয়াল সেন্টার অব ক্যালেন্ডার আর্ট হিসাবে শিবকাশী চালু হয়।
১৮৯০ – রাজা রবি ভৰ্মা মালোডি-তে বিগ লিথো প্রেস প্রতিষ্ঠিত করে, লোনোভালার কাছাকাছি।
১৯০৭ – উসমানি প্রেস, মাদ্রাস (উর্দু)।
১৯১৯ – শাহী প্রেস, মাদ্রাস (উর্দু)।
১৯২৪ – প্রথম প্রিন্টিং সার্টিফিকেট কোর্স, মাদ্রাস।
১৯২৫ – লুথেরান প্রিন্টিং প্রেস, ভানিয়ামবাড়ি।
১৯২৯ – মাজিদিয়া প্রেস, মাদ্রাস (উর্দু)।
১৯৩৮ – প্রথম ডিপ্লোমা কোর্স, মাদ্রাস।
১৯৮৩ – প্রথম ডিগ্রী কোর্স, মাদ্রাস।

বিশ্ব ইতিহাসে মুদ্রণের পরম্পরা

৩৫০০ খ্রী.পূর্বাব্দ – মিশরের প্যাপিরাস, এশিয়াতে ভেলিয়াম।
১০৪ খ্রী. – চিনে কাগজ আবিষ্কার।
৬১০ – কোরিয়াতে কাগজ আবিষ্কার।
৭০০ – জাপানে কাচামাল হিসাবে কাগজ।
৯০০ – বাগদাদ, দামাস্কাস, ট্রিপোলি, কাইরো, মরক্কো, স্পেন এবং ইতালিতে কাগজের ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়।
১১৫০ – স্পেনে প্রথম কাগজের মিল চালু হয়।
১৩৯০- জার্মানিতে পেপার।
১৪৪০-১৫৪০ – জোহানেস গুটেনবার্গ প্রথম নাড়াচাড়া করা যায় এমন টাইপে, লেটার প্রেসে ছাপা শুরু করেন, যা পরবর্তি ১০০ বছরে বিভিন্ন দেশে প্রসারিত হয়।
১৫০০ – লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি তৈরি করেন ক্যামেরা অবসকুরা।
১৫৬৮ – ক্যামেরার লেন্স।
১৭২৭ – এক্সপোজ করার মতো রুপো আবিষ্কৃত হয়।
১৭৯৬ – অলইস স্নেফেল্ডার লিথোগ্রাফি আবিষ্কার করেন, ফেডরিচ কোইনিগ প্রথম প্লাটেন মেশিন আবিষ্কার করেন।
১৭৯৯ – প্রথম দীর্ঘ-সিভ মেশিন লুইস রবার্ট তৈরি করেন।
১৮০৫ – প্রথম গোলাকৃতি সিভ মেশিন ব্রামাহ তৈরি করেন।
১৮১৪ – ২৯ নভেম্বর, টাইমস লন্ডন থেকে কোইনিগ সিলিন্ডার মেশিনে মুদ্রণ করে। (গতি ১১০০ আইপি.এইচ)
১৮১৭ – জার্মানিতে উজবার্গের কাছে ওবারজেলে ফেডরিক কোয়েনিগ ও আন্দ্রেস বায়ার স্থাপন করেন স্কানেলপ্রেসেনফ্যাবরিক কোয়েনিগ অ্যান্ড বায়ার।
১৮২২ – ড. উইলিয়াম চার্চ টাইপসেটিং মেশিনের পেটেন্ট নেন।
১৮২৭ – লুইস জাকস মৌডে দাগৌরে ফটোগ্রাফি শুরু করেন।
১৮৪৩ – প্রথম কাঠের মন্ড তৈরি করেন গোটফ্রায়েড কেলার।
১৮৪৩ – ফক্স টোলবোল্ট আঠার মিশ্রণ হিসাবে আঁঠা, জিলাটিন ও পটাসিয়াম ট্রাইক্রোমেট খুঁজে পায়।
১৮৪৭ – ফ্ল্যাটবেট মেশিনে চারটি ইউনিট রয়েছে, যাতে লেটারপ্রেস ব্যবহার করা হয়।
১৮৪৭ – লন্ডন টাইমস ছাপার ক্ষেত্রে সিলিন্ডার ফর্মের সাথে আমেরিকান মেশিন ব্যবহার শুরু করে।
১৮৫০ – ক্রিশ্চিয়ান সোরেনসেন টাশচিওটাইপ টাইপসেটিং মেশিন আবিষ্কার করেন।
১৮৫১- রোল পেপার আবিষ্কারের পর ওয়েব রোটারি শুরু হয়।
১৮৫২ – ফক্স টোলবোল্ট কাগজকে চোবানোর চেষ্টা করে।
১৮৫৫- ওয়াট ও বার্গিস প্রথম সেলুলোজ আবিষ্কার করেন।
১৮৬৬-লন্ডন টাইমস ওয়েব রোটারিতে ছাপা শুরু করে। (১২০০০ আই পি এইচ)
১৮৬৯ – লাইন কাস্টিং মেশিন তৈরি করেন চালর্স কাস্টেইনবেন।
১৮৭৯ -কার্ল ক্লিক হেলিও গ্রাভিওর আবিষ্কার করেন।
১৮৮৪ – ১৮৮৬ – ওটমার মার্জেনথালের লিনোটাইপ আবিষ্কার করেন।
১৮৮৬ – আর্নেস্ট আব্বে এরার ফ্রি অবজেকটিভ আবিষ্কার করেন।
১৮৯২ – জোশেফ স্কোলজ অ্যালগ্রাফি প্লেট (জিংক ও অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার করে) তৈরি করেন।
১৮৯৪-পোরজোল্ট দ্বারা সিংগেল ক্যারেক্টর এক্সপোজার দ্বারা ফটো কম্পোজ করা হয়।
১৮৯৬-লুইস লুমিরি প্রথম প্রজেক্টের কাজ করেন।
১৮৯৬- আর্নেস্ট রুল্ক এবং ডা. এডওয়ার্ড মার্টেন ফটো মেকানিক্যাল প্রসেস মাধ্যমে গ্রেভিয়র (নকশাকাটা) তৈরি করেন।
১৮৯৮-ফ্রেসি গ্রিন মাল্টি-ক্যারেক্টর এক্সপোজার ফটো কম্পোজিং শুরু করেন।
১৮৯৯-রম্ফ থিওডর রাইচ এবং ক্লিক তামার সিলিন্ডার প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।
১৯০৩-সংবাদপত্রের জন্য সঠিক নকশাকাটা মেশিন ব্যবহার শুরু হয়।
১৯০৪-১৯০৫-লুমায়ার রঙিন ফটোগ্রাফি শুরু করেন।
১৯০৭-রুবেল অফসেট প্রিন্টিং শুরু করে।
১৯১৩ – উইলবাস স্টিফেন স্কুড়ার ইন্টারটাইপ শুরু করেন।
১৯২৪ – ম্যাট্রিসেস দ্বারা প্রথম ফটো কম্পোজ করার মেশিন তৈরি করে, ফিল্ম ম্যাট্রিক্স মেশিনের উপর লিনোটাইপ লন্ডনের পেটেন্ট নেন।
১৯২৫ – এডওয়ার্ড উবের টিপিক্যাল ফটো কম্পোজিং মেশিন তৈরি করেন, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত দামের জন্য বাণিজ্যিকরণ করা যায়নি।
১৯২৯-১৯৪৫ – হান্টার, হাবনার, ওয়েস্টওভার ও ইলিয়ট দ্বারা বিভিন্ন ফটোকম্পোজিং ইউনিট।
১৯৪৯ – নিউ ইয়র্কে প্রথম লুমিটাইপ।
১৯৫৪ – লিনোটাইপ দ্বারা লিনোফিল্ম।
১৯৫৪-প্রথম এমডি পেপার মিল, জার্মানি কোটেট কাগজে ছাপা শুরু করে।
১৯৬৭- ডবল সাইডেট কোটিং-এর উন্নত প্রকার।
১৯৮৪- ডেস্ক টপ পাবলিশিং (যদিও ভারতে তা অনেক পরে এসেছে ১৯৯৫ সালের পর)।
আজও এই বইটি এই ডেস্কটপ পাবলিশিং মাধ্যমেই মুদ্রিত হয়েছে। এটিও এক ধরনের মুদ্রণ ও হরফের পরম্পরা।

তথ্যসূত্র—
i) Marshman, John Clark. The Life and Times of Carey, Marshman and Ward: Embracing the History of the Serampore Mission (2 vols). London: Spottiswood & Co., 1859.
ii) Grierson, G.A. The Early Publications of the Serampore Missionaries, The Indian Antiquary (June, 1903): 241-254.
iii) বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগৃহীত হয়েছে।

Leave a Reply

error: Content is protected !!