কমলেশ পাল : অন্তরালের শুদ্ধ কবি – সুশীল রায়

0
Subscribe to my YouTube Channel

‘পাজর পুরাণ’ দুই শব্দের বৃত্তানুপ্রাসে এক অপরূপ আত্মীয়তা। পড়লে বা শুনলেই পাঠক বা শ্রোতার বুকে কেমন যেন এক আয়ুর্বেদিক নিরাময় প্রলিপ্ত হয়। এই হলো শব্দের ওষধি গুণ। ঠিক মতো ডোজ দিতে পারলে মৃত্যুপথগামীও মুহূর্তে এক চিলতে হাসির বৈকালিক রোদ্দুরে আকাশ ভরিয়ে দিতে পারে। শব্দের এই গুণ জানতে হলে ডাক্তার বা ডক্টরেট হলে হয় না; কবি-রাজ হতে হয়। ‘পাঁজরের বেড়া’ দিতে জানতে হয়। একান্তে, নিপুণ হাতে এই কাজটি বিগত প্রায় পাঁচ দশক ধরে করে চলেছেন বাংলা সাহিত্যের এক সুযোগ্য শ্রমিক। হ্যাঁ, শ্রমিক। এখন সাহিত্য সেবায় শ্রমিকের দেখা মেলা ভার। মধ্যমেধার কলমও এখন সিংহাসন প্রত্যাশী। প্রবীন কবি কমলেশ পাল আজও এই প্রচার সর্বস্ব সস্তার বাজারে এক পৌরাণিক জীবন্ত কিংবদন্তী। ‘পাঁজর পুরাণ’ কবি কমলেশ পালের একটি কাব্যগ্রন্থের নাম। ওই নামে গ্রন্থটিতে একটি কবিতাও আছে যার শব্দদ্যূতির চৌম্বকক্ষেত্র পাঠককে সম্মোহিত করে রাখে। কবিতাটির অংশবিশেষ পড়লে পাঠকের মনে কবির সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা তৈরি হতে পারে- ‘ও কন্যা, ও অসামান্যা,/ প্রান্তিকের মনে বড়ো আশা/ বাংলার সন্ততি যেন বলে বাংলা ভাষা।’

 ভালো বলতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মন্দের তুলনা এসেই পড়ে। আবার কিছু সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতা আমাদের কোনো তুলনামূলক বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করায় না; একক সৌন্দর্যের মুগ্ধতায় আমরা অজান্তেই বলে উঠি- ‘আরে বাঃ!’ কবি কমলেশ পাল সেই তুলনারহিত একক সৌন্দর্য রচনা করে চলেছেন তাঁর ঐতিহ্যবাহী অথচ যুক্তিসম্মত উত্তর আধুনিক মননশীলতায়।

কমলেশ পাল নামটি বিশিষ্ট পাঠকজনের কাছে অশ্রুত কেন? দায়ভার অনেকটা কবির ওপরেই বর্তাবে। তবে সে-সব কথার আগে অতি সংক্ষেপে কবি কমলেশ পাল সম্পর্কে একটি ধারনা থাকা আবশ্যক।

 কমলেশ পালের জন্ম ৫ অক্টোবর, ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ; অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম বাইসারিতে। মাতা বীজনবালা পাল ছিলেন নিজের চেষ্টায় শিক্ষিতা। বাবা জিতেন্দ্র পাল ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও দরিদ্র সেবার জন্য দারিদ্র্য বরণ করে নিয়েছিলেন। মায়ের নানা রকম শিল্প সৃজনের আগ্রহ কমলেশকে প্রভাবিত ও প্রাণিত করে থাকবে। অল্প বয়স থেকেই কবিতা ও শিল্প সম্পর্কে এক টান গড়ে ওঠে। বালককালে নেতাজির তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু সংবাদের অভিঘাতে জীবনের প্রথম কবিতার উদ্ভব। ১৯৪৬-এ পারিবারিক এক শোকাবহ পরিস্থিতিতে বর্ধমান জেলার নজরুলের জন্মধন্য চুরুলিয়া গ্রামে চলে আসেন। সেখানেই ১৯৫০ সালে মায়ের এবং ১৯৫১ সালে বাবার মৃত্যু হয়। এর পরেও সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। মাত্র ষোলো বছর বয়স থেকেই নানা ধরনের চাকরি করতে করতে ১৯৫৫ সালে জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায় শ্রমিকের চাকরি পান। দশ ক্লাসের পরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর এগোয়নি। একা একা রাত জেগে নানা ভাষার যা-খুশি পড়ে গেছেন নাগাড়ে। রবীন্দ্রিক কবিতা লিখে গেছেন অত্যন্ত গোপনে। তবে ১৯৫৪ সাল থেকে জীবনানন্দ দাশ ও প্রণবেন্দু দাশগুপ্তের কবিতার সংস্পর্শে এসে নির্মিতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। ১৯৬৬-এ মিতা পালের সাথে বিবাহ এবং অভ্যস্ত অভাবে, সুখে কাল যাপন দীর্ঘস্হায়ী হয়নি। ১৯৭৬-এ চাকরিতে উদ্বৃত্ত ঘোষিত হওয়ার পর আত্মহত্যার প্রবণতা জাগতে থাকায় বাঁচার জন্য তিনি কবিতাকেই একমাত্র আশ্রয় ভেবে আঁকড়ে ধরেন। এবার তিনি সিদ্ধান্ত নেন, রাবীন্দ্রিক কবিতা নয়, নিজের ভাষায় কবিতা লিখবেন এবং তা ছন্দে। এ সময়ে তিনি শ্যামনগরে থাকতেন। ওখানকার বিশিষ্ট কবি দ্বিজেন আচার্য এবং তৃণাঙ্কুর ম্যাগাজিনের সম্পাদক গৌরাঙ্গদেব চক্রবর্তী তাকে প্রভূত উৎসাহ যোগান। অল্পদিনেই কমলেশ পালের কবিত্ব শক্তি অনেককেই চমকিত করে। তার ছন্দজ্ঞান বাংলার শ্রেষ্ঠ ছান্দসিক কবিদের সমতুল্য- এমন কথাও কেউ কেউ বলতে থাকেন। এমনই এক উজ্জ্বল সময়ে কবি অনুভব করেন, প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকার কবি-লেখকদের লোলুপ আত্মসমর্পন। কবি একগুঁয়ে ভাবে, প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকায় লেখা ছাপাবেন না, সিদ্ধান্ত নেন এবং এটাও মনস্থ করেন যে, আমন্ত্রন ছাড়া লিটল্ ম্যাগাজিনেও কবিতা দেবেন না। তার কাজ শুধু শিল্পসম্মত শুদ্ধ কবিতা সৃজন করে যাওয়া।

 এরপর কবি কমলেশ পাল মধ্যমগ্রামে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। কবির গুণমুগ্ধ পাঠক ও আগ্রহী ছাত্রের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাড়ি হয়ে ওঠে কবিতার কর্মশালা। মধ্যমগ্রামের ছাত্র দিলীপ কুমার দত্ত নিজস্ব দায়বদ্ধতা থেকে ১৯৮৫ সালে প্রকাশ করেন কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সেই মুখ, সেই আর্তনাদ’। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘অবিশ্রাম রক্তের প্রপাত’।

১৯৯৩ সালে কর্মজীবন থেকে অবসর প্রাপ্ত। তখন থেকে মধ্যমগ্রামের বাড়ি হয়ে ওঠে কবিতাপ্রেমীদের অবারিত দ্বার; যথার্থ কবিতাবাড়ি। কবির সার্থক উচ্চারন শোনা যায় ‘দিন আমার ভালো যায়’ কবিতায়- ‘ঘুম থেকে উঠে মানুষের মুখ দেখলে/ দিন আমার ভালো যায়’। বাংলা কবিতার চিরায়ত ধারাকে আত্মস্থ করেই সমকালকে ছুুঁতে চেয়েছেন কবি। সময়ের থেকে কখনওই তিনি নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেননি। এ কারণেই কবি কমলেশ পাল ৮৩ বছর পেরিয়েও সমকালিন তরুন কবিদের ঈর্ষার কেন্দ্রে বাস করতে পারেন। একদিকে তাঁর কলমে লেখা হয়- ‘চোখ রাঙাবি না/ নাই-কুণ্ড, দাবনা দেখাবি না-/নিজের ভাষায় আছি, নিজের মাটির কোলে আছি’ কিংবা ‘ললাটে মায়ের চুমু অক্ষয় জড়ুল আঁকা আছে-/ লোকটি বাংলা বলে, বাংলাভাষা জন্মদাগ তার’। অন্যদিকে সেই কবির হাতেই লেখা হয় ‘সিলিং ওয়াক্স,’ ‘ম্যাগপাই, ‘থার্ডপ্রুফ সংশোধিত হলে,’ ‘ক্লাউড-বার্স্ট’,’ ‘বনকুর্চির মেইলব্যাগ কাঁধে’র মতো উত্তর আধুনিক কালের কবিদের টেক্কা দেওয়ার মতো নামকরণের কবিতা। ঐতিহ্যের প্রতি নিবিড় টান রেখেও তিনি সততই ঐতিহ্যের নামে কুৎসিত কদাচার, ভ্রান্তবোধের ও অন্ধত্বের বিরুদ্ধ স্বর। এখনও পর্যন্ত প্রচারবিমুখ কবির প্রকাশিত সবগুলি কাব্যগ্রন্থই প্রকাশ করেছেন তাঁর কবিতাপ্রেমীরাই। কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হল- সেই মুখ, সেই আর্তনাদ, প্রকাশ ১৯৮৫; অবিশ্রাম রক্তের প্রপাত, প্রকাশ ১৯৮৮; ডানায় আকাশ, প্রকাশ ১৯৯৬; নির্বাচিত কবিতা সমগ্র, প্রকাশ ১৯৯৮; পাঁজর পুরাণ, প্রকাশ ২০০৫; হা হা হাওয়া কারুবাসনার, প্রকাশ ২০০৯; রা, প্রকাশ ২০১৬; অন্ধের ওয়াকিঙ্ স্টিক, প্রকাশ ১৯১৬। ইতিকথা পাবলিকেশনের তরুণ প্রকাশক শূদ্রক উপাধ্যায় ২০১৯ সালে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশ করেছেন কবির তিন শতাধিক কবিতার সংকলন ‘কবিতা সংগ্রহ’ যা নিশ্চয় এ শতকের অন্যতম ভালো কাজ হিসেবে সময় চিনে নেবে।

 বাংলা সাহিত্যের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে কবিতার মেলা’র সম্পাদকমন্ডলীর পক্ষ থেকে সুসাহিত্যিক শ্রী দেবব্রত সান্যাল, শ্রী শুভাসিশ আচার্য এবং শ্রী সোমাদ্রি সাহা প্রবীন কবির বাড়িতে গিয়ে তাঁর হাতে তুলে দেন ‘কবিতার মেলা সম্মাননা’। কবিতার মেলা’র পক্ষ থেকে কিছু মানবিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কবির একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।

কবিতার পাশাপাশি ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ রচনায়ও কমলেশ পালের কলম স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। ৮৩ পেরিয়েও অসুস্থ শরীরে কবি লিখে চলেছেন আত্মজীবনী। সময়ের বিচারে কবি কমলেশ পাল নিশ্চয় বিজয়ী হবেন আর বাংলা ভাষার পাঠক পাবেন তাদের প্রতীক্ষিত অন্তরের কবিকে।

কিছু কবিতার রসাস্বাদনে বঞ্চিত করলে পাঠক ও কবির প্রতি অবিচার করা হবে—

জগৎনাগর

যে নারী জানলা দিয়ে থুথু ছুড়ে মেরেছে এ-মুখে

টার্গেট অব্যর্থ তার। তাকে এই তুমুল স্যালুট!

মুখ থেকে অপমান মুছেটুছে

হাহা হেসে আমি

তার দিকে চুমু ছুড়ে দেবো।

আমিও অনেক দিন চাঁদমারি প্রাক্টিস করেছি,

অনেক কলসির কানা – ঘৃণা খেয়ে খেয়ে

গোপিনীকে বাঁশি শুনিয়েছি।

জানলাবাসিনী শোনো,

আমি গৌর, নামসংকীর্তনে আছি জগৎনাগর।


গোলাপ-যুদ্ধ

মাঘের তিরিশ হয়ে গেল।

শীতচুক্তি আজ কিন্তু হয়ে গেল শেষ।

এবার বসন্তযুদ্ধ… শোনো ওই কোকিল-নির্ঘোষ।

তোমাকে চরমপত্র পাঠাচ্ছি হাওয়ায়-

যতই অনিহা পোষো… বর্ম পোষো শরীরে তোমার,

পরিখা ডিঙিয়ে যাবে তোড়া-তোড়া মোক্ষম গোলাপ।

চতুরঙ্গে খরশান সমূহ প্রস্তুত সেজে থেকো।

তোমার দুর্গকে ঘিরে একলক্ষ কবিতা বর্ষাবো…

কামানের মুখ থেকে ছুঁড়ে দেবো

মুহুর্মুহু মতিচ্ছন্ন গান…

প্রতিরোধ ভেঙে দেবে বাহুচাপ, ওষ্ঠ-নাশকতা…

বাধাবন্ধ ছারখার… জলস্রোতে জ্বালাবো আগুন।

তেসরা ফাল্গুন কিন্তু গিরি, গুহা সমস্ত দখল…

তোমার ওই খোপাটির অজেয় চূড়ায়

তেসরা ফাল্গুন আমি গোলাপের ঝাণ্ডা পুঁতে দেবো।


অস্তাচলে অনাসৃষ্টি

ডাকতে ডাকতে… ডাকতে ডাকতে… রক্তবমন।

        ও কিছু নয়।

মন্ত্র থেকে তীব্র তার-এ হঠা করে উঠতে গেলে

            কণ্ঠ চিরে অমনটা হয়।

                ও কিছু নয়।

আমরা কি আর জানতে পারি

    টানের মধ্যে গোপনে জং কখন লাগে?

    কোন বাতাসে বাঁশির মনে ঘুণ ধ’রে যায়…

বুকের মধ্যে আপনি লাগে কখন যে ক্ষয়…

            জানতে পারি?

ডাকতে ছিলাম… ডাকতে ছিলাম…

আকাশ-বাতাস পাগল করে ডাকতে ছিলাম…

        তাকাওনি তো কী হয়েছে?

তুমি তখন হয়তো ছিলে নিজের মধ্যে অন্যখানে

              অন্য গানে, অন্য টানে

            গৌড়সারঙ্গে বা যোগীয়ায়

            অল্প মিড়ে… দীর্ঘ ঝালায়।

তুমি যখন মগ্ন ছিলে ঘোর আলাপের নতুন লোকে

        তখন আমি ডাকতে ডাকতে

        ঝলক ঝলক রক্ত ছুঁড়ে

        রাঙিয়ে দিচ্ছি মেঘগুলোকে

শেষ বিকেলের অস্তাচলে অনাসৃষ্টি এসব ঘটে…

            ও কিছু নয়।


মুখভার আকাশলিপিতে

কিছুটা ভোরের কথা নিষিদ্ধ রয়েছে।

বার্চ, পাইন, পাহাড়ের ঢাল…

কেউ কিছু বলছে না,

বাচাল তিতিরটিও চুপ।

মাঝরাতে কী যে গ্যাছে ঝড়ের অ্যাকশন-

ঘনঘন বজ্রচার্জ… ধস,

বনময় তছনছ চিরুনি-তল্লাস!

দেখে দেখে জলঝর্না চুপ মেরে গেছে।

দিগন্ত দেয়ালে সাঁটা মেঘের নোটিশ।

পাঁচটা-পঁচিশ তবু, বাইফোকাল ঘষেটষে আমি

একটি অক্ষরও তার পড়তে পারি না।

মনে হয়, মুখভার আকাশলিপিতে

কিছুটা ভোরের কথা আজকেও নিষিদ্ধ রয়েছে।


তিলস্পর্শ

পড়েছে কপালে তিল, সুন্দর হয়েছে।

কপালে পড়েছে বলে ভালোবাসা তিল পরিমান

অমৃতা হয়েছ তুমি… অপরূপা হয়ে

দু’হাতে প্রদীপ তুলে ঊর্ধ্বে চেয়ে আছো।

মুখে-মাখা প্রদীপ-প্রতিভা!

দুপুরে কি পড়ছিলে আমার কবিতা?

আমার কবিতাগ্রন্থে মুখ ঢেকে, সংসারকে ঢেকে

ঘুমিয়ে কি পড়েছিলে তুমি?

মনে করে দ্যাখো,

সে গ্রন্থের কোনো কবিতার

অতি অতি অতিক্ষুদ্র তিল-অনুভব

চুমু দিয়েছিলে কিনা সোহাগিনী তোমার কোথাও?

প্রয়াত কবির প্রেম অক্ষরে অশেষ হয়ে রয়।

তিল তার যদি কোনো পাঠিকাকে ছোঁয়

সে নির্ঘাত তিলোত্তমা হয়।


পোড়োবাড়ি

এখানে ছিল ফুলবাগান, ছিল বাংলোবাড়ি

দাঁড়িয়ে ছিল লাল-শাড়িতে ছলাচ্ছল নারী।

হুলুস্থুল নিজেকে নিজে বলেছিলামঃ দাঁড়া!

থামাও ছিল অসম্ভব, ছিল ছোটার তাড়া।

আমি তখন ভীষণ হূন, তখন চেঙ্গিজ

রক্তে শাখা ছড়াচ্ছিল আত্মনাশী বীজ।

অশ্ব থেকে সচিৎকার বলেছিলামঃ রানি!

রাত্রি হোক, মৃত্যু হোক, ফিরে আসবো আমি।

শেষ প্রহরে অশ্বহারা ফিরেছি কঙ্কাল

মাটালটাল… মাটালটাল… খুবই টালমাটাল

অনেকখানি তৃষ্ণা নিয়ে করেছি মরু পার…

মাত্র এক চুমুক নারী, তোমাকে দরকার।

ছড়ানো খড় ইতস্তত, হাওয়াতে হিম শ্বাস…

উজাড়-বেড়া উঠানখানি ঢেকেছে বেনাঘাস।

কোথায় গেল ছলাচ্ছল নদীর মতো নারী?

নিরুত্তর বসিয়া রয় বিরান পোড়োবাড়ি।


দিগন্তে সবুজ নড়ে

আকাশ ডাকে।

-আসি…!

এরোড্রোমে দাঁড়িয়ে আছে

    আমার সর্বনাশী!

জাহাজ ছিল আমার অপেক্ষাতে।

নানাবিধ সমস্যাতে

    বাঁধা-লাগেজ বাঁধছি আবার

        দেরি হচ্ছে তাতে।

সমুদ্র আজ ব্যস্ত জলোচ্ছ্বাসে।

ভীষণ কোটাল ঝঞ্ঝা ত্রাসে

    নোঙর ছিঁড়ে তলিয়ে যাচ্ছে

        জাহাজ জলের গ্রাসে।

ঘুমের মধ্যে শুনি বারংবার

    জলস্থলে অন্তরীক্ষে

    হর্ন যে বাজে কার…

দূর দিগন্তে তার কি সবুজ

    নড়ছে রাশি রাশি?

আকাশ ডাকে।

-আসি…!

এরোড্রোমে দাঁড়িয়ে আছে

    আমার সর্বনাশী!

Subscribe to my YouTube Channel

Leave a Reply

error: Content is protected !!