সোনার বাংলা চা – দেবব্রত সান্যাল
ফেলুদার সেই বিখ্যাত উক্তি মনে আছে তো? সোনার ফসল, সোনার ছেলে, সোনার বাংলা কী সোনা দিয়ে তৈরি? তাই জানা গেল সোনার পাথরে তৈরি সোনার কেল্লাও সোনা দিয়ে তৈরি নয়। সোনার বাংলা চা কিন্তু এর ব্যতিক্রম। আমার বাবা যখন জলপাইগুড়ির আঞ্জুমান টী কম্পানিতে কাজ করতেন তখন আঞ্জুমান কথার অর্থ বা চায়ের স্বাদ কোনোটাই জানতাম না। আটাত্তরে যখন মুকাদ্দর এলো তখন আঞ্জুমানে বারবার যেতে হয় কেন বোঝার মতো পেকে গিয়েছি। আর চা খাওয়াটা দুধ চায়ের হাত ধরে শুরু। দুধে গন্ধ লাগে আবদার মেটানোর জন্য মা একবার ছাঁকনিটা ডুবিয়ে তুলে নিতেন। ডিপ ডিপ এর পূর্বসুরী । জলপাইগুড়িতে তখন অনেক চা কম্পানির হেড অফিস ছিল। বার্ষিক মিটিঙে এক পাউন্ড চা আর মিষ্টির বাক্স দেওয়া হতো। এক স্বর্ণযুগে তো ফ্লাস্ক, চায়ের কাপও পেয়েছি। রাম না অযোধ্যা কে আগে গেল জানি না, জলপাইগুড়ির ধানের জমিতে চা চাষ শুরু হলো বটে কিন্তু টাকাটা অন্যত্র চলে গেলো। বাংলা ছেড়ে যাবার পর জীবনে প্রথম গাঁটের কড়ি খরচ করে চা কিনতে বড় কষ্ট হয়েছিল। প্যাকেটে ভরা চায়ের দাম দেখে চোখ কপালে উঠেছিল। তখন কী জানতাম কপালে চোখ ওঠার অনেক বাকি। বাবার সাথে চায়ের ফ্যাক্টরি ঘুরে চা পাতা বানানো দেখা, সিটিসি আর লিফ টীর তফাত বোঝা সব স্কুলে থাকতেই সম্পন্ন হয়েছিল। চায়ের সবুজ পাতার সাথে সোনার যোগ পাই নি।খবর পেলাম, ১০৩ ব্রিক লেনে লন্ডনের তিনশো বছরের পুরনো লন্ডন টী এক্সচেঞ্জ এক পৃথিবী বিখ্যাত চা কোম্পানি। তাঁরা এবছরের মে মাসে দ্য গোল্ডেন বেঙ্গল নামে একটি চা আনতে চলেছেন যার এক কেজির দাম হবে চোদ্দ কোটি টাকা। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী পানিয় হলো বিলিনিয়ার ভদকা, যার পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৩.৭ মিলিয়ান ইউ এস ডলার মানে প্রায় সাড়ে সাতাশ কোটি টাকা। এর বোতলের গায়ে নাকি তিন হাজার হীরে আর ক্রিস্টাল থাকে। জানি না তুলনাটা করা যায় কিনা। তবে একটা কথা বুঝি কোনো কিছুকে মহার্ঘ করতে গেলে তাকে সোনা হীরেয় মুড়ে দিতে হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র প্রশ্ন করেছিলেন, যে সুন্দর সে মাটি ছাড়িয়া হীরা পড়ে কেন? মনে হয় কেনর উত্তরটা পাওয়া গেল। সিলেটের বাগানে সাড়ে চার বছর ধরে বানানো এই চায়ের হ্যাপা অনেক। ন’শো কেজি চায়ের নির্বাচিত এক কেজি পাতাকে সোনায় মোড়া হবে। তাতে চায়ের স্বাদ গন্ধর কতটা উন্নতি হবে সেটা বোঝা আমার মতো জলপাইগুড়িয়ার পক্ষে সম্ভব না। চায়ের প্রজাতি ব্ল্যাক টি, কিন্তু চায়ের কাপে এসে সোনালী হয়ে যায়। কম্পানির মালিক আলিউর রহমান নাকি বলেছেন উনি ওঁর কর্মচারীদের বেতন তিনগুন করে দেবেন। চা কুলির রক্ত – এই কথাটিকে মিথ্যা প্রমান করে সোনালী চা আসছে বাজারে। তবে সে চা অনেক কিছুর মতো ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে।
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (একাদশ কিস্তি)বৃষ্টির শুরুতেই সামান্য ঠান্ডা পড়তে শুরু করলো। ক্লাবে লোক আসা একটু কমলো। বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেলতে…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (দশম কিস্তি)(৮) শিফট ডিউটি আরম্ভ হতেই জীবনটা জীবিকার প্রয়োজন মাত্র হয়ে দাঁড়াল। অদ্ভুত সময়ে ঘুম থেকে…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (নবম কিস্তি)আমাদের পুরো ব্যাচটাকে কয়েকটা ছোট ছোট দলে ভাগ করা হলো। আমাদের দলে আমি, কর, সিং…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (অষ্টম কিস্তি)আমার মুখে হাসির ছোঁয়া দেখে বিপদভঞ্জন দুঃখ দুঃখ মুখ করে জিজ্ঞেস করল, ‘ছেড়ে দিলো?’ ‘কান…
- কচ্ছপের বেঁচে থাকা – দেবব্রত সান্যাল (সপ্তম কিস্তি)নিকলের নিয়োগপত্র বার পাঁচেক খুঁটিয়ে পড়ে নিশ্চিন্ত হয়ে, আমার টুইডের কোটটা গায়ে দিয়ে অফিসে গেলাম।…