লন্ডনে হীরে মানিক জ্বলে – দেবব্রত সান্যাল
লন্ডন টাওয়ারে ঢুকলে সবাই ভাবে যাই একবার আমাদের কোহিনুরটা কেমন আছে দেখে আসি। আমাদেরই বটে। লন্ডন টাওয়ারে জুয়েল হাইস বলে একটা আলাদা জায়গা আছে তাতে রাখা ২৩,৫৭৮ টি হীরে মানিকের একটি হলো কোহিনুর। যদিও এসব সম্পত্তির ইনশিওরেন্স নেই তাই সঠিক মূল্যায়ন হয় নি। তবে চার থেকে ছয় বিলিয়ন (ম নয়, ব ) ডলারের মধ্যে। কোহিনুর আমাদের গোলকুণ্ডা খনি থেকে উঠেছিল বলে মনে করা হয় আর বাবর সেটা হস্তগত করেছিলেন। কাকাতিয়া রাজবংশ থেকে নেন আলাউদ্দিন খিলজি আর তার থেকে বাবর। তারপর ১৭৩৯ সালে নাদির শাহ দিল্লী লুঠ করার সময় ছল করে হীরাটি নিয়ে যান। কোহিনুর নামটাও নাদির শাহর দেয়া।অষ্টাদশ শতাব্দীতে ‘The History of Nadir Shah’ তে James Fraser লিখেছেন নাদির শাহ ৭০ কোটি টাকার সামগ্রী লুট করে নিয়ে গিয়েছিলেন। হিসাবটা কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর!মনি মানিক্য – ২৫ কোটি বাসন ও রত্ন খচিত অস্ত্র, ময়ূর সিংহাসনের রত্ন – ৯ কোটি স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা – ২৫ কোটি সোনা আর রুপোর বাসন – ৫ কোটি (গলিয়ে ফেলা হয়েছিল)বস্ত্র ও অন্যান্য – ২ কোটি আসবাব, সাজানোর জিনিস – ৩ কোটিঅস্ত্র – ১ কোটি ।নাদির শাহর হত্যার পর কোহিনুর কাবুলের আহম্মদ শা আবদালীর হাতে আসে আর সেখান থেকে আসে মহারাজ রনজিৎ সিংএর কাছে।১৮৩৯ সালে নিজের মৃত্যু শয্যায় রনজিত সিং উইল করে কোহিনুর পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে দিয়ে যান। আর ১৮৪৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাপে রাজা দলীপ সিং তাদের হাতে কোহিনুর তুলে দেন। কী যেন বলে? কার গলায় মুক্তোর মালা! কোহিনুর যার কাছে ছিল সেই জন লরেন্স নাকি হীরাটি একটা কৌটোয় কোটের পকেটে রেখে ভুলে মেরে দিয়েছিলেন। যখন লর্ড ডালহাউসির কাছ থেকে হুকুম এলো হীরা লাহোর থেকে মুম্বাই আনা হোক তখন তিনি তাঁর ভৃত্যকে খুঁজতে দিলেন। ভৃত্য নাকি বলেছিল, সাহেব এখানে একটা কাঁচের টুকরো আছে, আর কিছু নেই।তার মানে নাদির শাহর বিষ্ময় আর এক খানসামার অবজ্ঞায় এসে নামলো। লর্ড ডালহাউসি নিজে জাহাজে চেপে কোহিনুর ইংল্যান্ডে নিয়ে গেলেন।
ততদিনে রটে গেছে এই হীরা পুরুষদের পক্ষে অপয়া। সেই সময় কোহিনুর দেখতে দরিয়া এ নুরের মতো ছিল। ওজন ছিল ১৮৬ ক্যারট ( হীরার ভরি হয় না, রতি হয় – হীরকরাজ) । তাকে ওভাল ব্রিলিয়ান্ট কাট দেওয়া হলো, ওজন দাঁড়ালো ১০৫.৬ ক্যারট। মহারাণী ভিক্টোরিয়া হীরাটিকে ব্রোচে আর আর্মলেটে পরতেন, ১৯০১ সালে তাঁর মৃত্যুর পর কোহিনুর বসলো রানি আলেকজান্দ্রার (সপ্তম এডোয়ার্ডের স্ত্রী) মুকুটে। এরপর ১৯১১ সালে কুইন মেরীর মুকুটে আর ১৯৩৭ সাল থেকে রানি এলিজাবেথের মুকুটের শোভা বাড়াচ্ছে। তবে কোহিনুরের চেয়ে অনেক বড় হীরা ওখানে আছে। যেমন Cullinan I (৫৩০.২ ক্যারাট) Cullinan II (৩১৭.৪ ক্যারাট) ! ১৯০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় এক বিশাল হীরা পাওয়া যায়। সেটাকে কেটে পালিস করে ৯টা বড় আর ৯৬ টা ছোট হীরা তৈরী হয়। জুয়েল হাউস হীরে মানিক ছাড়াও সোনার পাত্রে ভরা। একটা মদ রাখার বিশাল পাত্র আছে, যাতে ১৪৪ বোতল মদ ঢালা যায়। এ রকম অনেক।এখানে অন্য মিউজিয়ামেও দেখেছি দামী পাথর জনগণের দেখার জন্য সাজানো থাকে। আমাদের দেশের এসব গুলো কী কোনো ব্যক্তি বিশেষের ব্যাঙ্কের সিন্দুকে থাকে? তাহলে ওগুলো আর আমাদের বলি কী করে?